বাংলা
কবিতার নাম : রুপনারানের কূলে।
কবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মূল গ্রন্থের নাম : শেষ লেখা
প্রতিটি প্রশ্নের মান : ১
১) রূপনারানের কূলে কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২) রূপনারানের কূলে কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর:- শেষ লেখা।
৩) রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি কি জানলেন?
উত্তর:- এ জগৎ স্বপ্ন নয়।
৪) "রক্তের অক্ষরে দেখিলাম" - কবি রক্তের অক্ষরে কি দেখলেন?
উত্তর:- কবি দেখলেন আপনার রূপ।
৫) "চিনিলাম আপনারে" - কবি কিভাবে নিজেকে চিনলেন?
উত্তর:- আঘাতে আঘাতে ও বেদনায় বেদনায়।
৬) কবি রবীন্দ্রনাথ কোথায় জেগে উঠেছিলেন?
উত্তর:- রূপনারানের কূলে।
৭) "সে কখনো করে না" -সে কি করে না?
উত্তর:- বঞ্চনা।
৮) সকল দেনা কিসের শোধ হয়?
উত্তর:- মৃত্যুতে।
৯) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ কি চেয়েছেন?
উত্তর:- সকল দেনা শোধ করতে।
১০) "রূপনারানের কূলে" কবিতায় কবির মতে এ জীবন কি?
উত্তর:- দুঃখের তপস্যা করার জন্য।
১১) যে কখনো বঞ্চনা করে না, সে কে?
উত্তর:- সত্য।
১২) "রূপনারানের কূলে" - কবিতায় রূপনারায়ণ নদটি কিসের প্রতীক?
উত্তর:- বিশ্ব সংসারের।
১৩) কবি রবীন্দ্রনাথ "রূপনারানের কূলে" কবিতাটি কোথায় লিখেছেন?
উত্তর:- শান্তিনিকেতনে।
১৪) কবি রবীন্দ্রনাথ কিসের মূল্য লাভ করতে চেয়েছেন?
উত্তর:- সত্যের দারুন মূল্য।
১৫) 'এ জগৎ' কি নয়?
উত্তর:- স্বপ্ন নয়।
১৬) "রূপনারানের কূলে" কবিতাটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- ১৩ ই মে, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে।
১৭) "রূপনারানের কূলে" কবিতাটি "শেষ লেখা" কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
উত্তর:- ১১ সংখ্যক কবিতা।
১৮) কবি কি লাভ করার কথা বলেছেন?
উত্তর:- সত্যের মূল্য।
১৯) "রূপনারানের কূলে" কবিতার মূল সুর কোনটি?
উত্তর:- মৃত্যুচেতনা।
২০) রূপনারানের কূলে জেগে ওঠার অর্থ কি?
উত্তর:- জীবনবোধে প্রাঞ্জ হয়ে ওঠা।
২১) "কঠিনেরে ভালোবাসিলাম" - কবি কঠিন কে ভালোবেসেছেন কেন?
উত্তর:- সত্য জিনিসটি কঠিন।
২২) "আমৃত্যুর দুঃখের দুঃখ তপস্যা এ জীবন" - কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা মনে করেছেন কেন?
উত্তর:- অনেক দুঃখ - কষ্ট, আঘাত ও বেদনার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন চলতে থাকে। জীবনে থাকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা। এভাবেই জীবনভর চলাকে কবি আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা বলেছেন।
২৩) "সত্যের দারুন মূল্য লাভ করিবারে" -সত্যের দারুন মূল্য কি?
উত্তর:- সত্যের দারুন মূল্য হল সত্য স্বীকারের জন্য আত্মত্যাগের মতো কঠিন দাম চুকিয়ে দিতে হয়। এই সত্যকে লাভ করতে হয় 'দুঃখের তপস্যা'-র মধ্য দিয়ে।
২৪) 'এ জীবন'-কে "রূপনারানের কূলে" কবিতায় কিভাবে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর:- আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এই জীবন। অর্থাৎ জাগতিক নিয়মের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিমুহূর্তে দুঃখকে বরণ করে নিতে হয়। দুঃখের সঙ্গে সংগ্রাম করে বিশ্ব মানবকে বেঁচে থাকতে হয়।
২৫) "সকল দেনা শোধ করে দিতে" - সকল দেনা বলতে কী বোঝো?
উত্তর:- "সকল দেনা" বলতে মানুষ তার জীবনে যা যা অর্জন করেছে, কবি সেসবের কথাই বলেছেন। এই 'সকল দেনা' মৃত্যুর হাতে কবি নিজেকে নিশ্চিন্তে পরিপূর্ণরূপে সঁপে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শোধ হবে বলে মনে করেন।
২৬)" চিনিলাম আপনারে" - কবি আপনাকে কিভাবে চিনলেন?
উত্তর:- জীবন সায়াহ্নে উপনীত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কঠোর বাস্তবের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে আত্মোপলব্ধি করেছেন জীবন - মৃত্যুর স্বরূপ। কবি বুঝেছেন জীবন সুন্দর, জগত সুন্দর, এবং মৃত্যুও সুন্দর। কবির কল্প জগৎ বাস্তব জগতের মাটি স্পর্শ করল এবং কবি নিজের প্রকৃত স্বরূপ চিনতে পারলেন।
প্রতিটি প্রশ্নের মান - ৫
১) "রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ" - বক্তা কে? বক্তা কিভাবে রক্তের অক্ষরে আপনার রূপ দেখেছিলেন?
উত্তর:- প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত "শেষ লেখা"কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত আমাদের পাঠ্য "রূপনারানের কূলে" কবিতা থেকে সংগৃহীত হয়েছে। উক্তিটির বক্তা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং।
"রূপনারানের কূলে" নামাঙ্কিত কবিতায় আমরা দেখি যে, জীবন সায়াহ্নে উপনীত কবি উপলব্ধি করেছেন যে জগৎকে তিনি এতদিন স্বপ্ন বলে জানতেন, সেই জগৎ আসলে কোন স্বপ্নের জগৎ নয়। পৃথিবীতে কবির যখন চেতনার জাগরন ঘটে তখন তিনি স্বপ্নের মায়া থেকে সরে আসেন। জগৎ ও জীবনকে তিনি দেখেছিলেন স্বপ্নের মায়াঞ্জন লাগিয়ে নয়, নিত্য দুঃখের তপস্যার মধ্য দিয়ে।
কবি অনুভব করেছিলেন দুঃখের মধ্যে সত্য লুকিয়ে আছে। রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি উপলব্ধি করলেন :
"জানিলাম এই জগৎ/ স্বপ্ন নয়"।
মৃত্যুর ছলনা জীবনের গতিকে রুদ্ধ করতে পারে না। কবি মৃত্যু ভয় কে ছিন্ন করে কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন। জীবনের পর্ব থেকে পর্বান্তরে চলবার সময় কত বাধা - বিঘ্ন - বিপদ তাঁর গতিকে রুদ্ধ করেছিল। কবি জেনেছিলেন : "সত্য যে কঠিন"।
গভীর দার্শনিক ভাবনা থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে জগতের আনন্দযজ্ঞে নিয়োজিত করেছিলেন। এইভাবে মনুষ্যত্বের অমরতায় বিশ্বাসী রবীন্দ্রনাথ জীবন দেবতার কাছে প্রার্থনা করেছেন তিনি যেন সত্যের দারুন মূল্য দিতে পারেন। এইজন্য স্বপ্নে নয়, রক্তের অক্ষরে কবি নিজেকে চিনেছিলেন।
২) "কঠিনেরে ভালোবাসিলাম" - বক্তা কে? বক্তা কিভাবে কঠিন কে ভালোবেসে ছিলেন?
উত্তর :-আলোচ্য উক্তিটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা রূপনারানের কূলে থেকে সংকলিত হয়েছে। এখানে বক্তা হলেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। আলোচ্য কবিতায় দেখা যায় রূপনারানের কূলে অর্থাৎ রূপময় এই পৃথিবীর টানে কবি জেগে উঠেছিলেন।
কবি জীবন ও জগতের সবকিছুর সত্যরূপ অনুসন্ধান করেছেন। আজীবন অনেক তপস্যা, অনেক দুঃখ, অনেক আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার পর কবি সত্যের কাছে পৌঁছেছেন। এইভাবে রক্তাক্ত হওয়ার পর কবি উপলব্ধি করেছেন - " Our sweetest song are those that tale of saddest thought".
দুঃখের অভিঘাতে জীবনের আনন্দ অনুসন্ধান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনে অসংখ্য বেদনা ও রক্তক্ষরণকে কবি সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন। মৃত্যুর ছলনা জীবনের গতিতে রুদ্ধ পারেনা। বাল্য থেকে বার্ধক্য কবি মন আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে বসে কবি পরিপূর্ণতা খুঁজলেও দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে বিচ্যুত হননি। আসলে কবি জানতেন স্বপ্নবিলাস শুধুমাত্র জীবনের সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। তাই কবি কঠিন সত্য কে ভালবেসে জীবনের পরিপূর্ণতা লাভ করেছেন।
৩) ''রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম" - বক্তা কে? তিনি রূপনারানের কূলে জেগে ওঠে কি করেছিলেন?
উত্তর :- প্রশ্নোদ্ধৃত তাৎপর্যময় অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত আমাদের পাঠ্য রূপনারানের কূলে কবিতা থেকে সংগৃহিত হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন জীবনবাদী কবি। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত কবি সত্যকে উপলব্ধি করেছেন। যে জগতকে তিনি এতদিন স্বপ্ন বলে জেনেছেন, সেই জগত আসলে কোন স্বপ্নের জগত নয় - সে জগত আসলে স্নেহময়, প্রীতিময় আত্মীয়তার জগত। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কবি জানলেন সত্য বড় কঠিন। তবু আমাদের সেই সত্যকেই গ্রহণ করতে হয়।
মৃত্যুর ছলনা জীবনের গতিকে রুদ্ধ করতে পারেনা। এ জগত রূঢ় বাস্তবের রনভূমি। এখানে প্রতিমুহূর্তেই ঘাত প্রতিঘাত সুখ-দুঃখ ব্যাথা বেদনার মোড়কে বাঁধা। সে বাধাকে অতিক্রম করে মৃত্যু ভয় কে ছিন্ন করে তিনি কঠিন সত্য কে আপন করে নিয়েছেন রক্তের অক্ষরে তিনি চিনেছিলেন আপনার রূপ।
৪) "সত্য যে কঠিন" - এই উপলব্ধিতে কবি কিভাবে উপনীত হলেন, তা "রূপনারানের কূলে" কবিতা অবলম্বনে লিখো।
উত্তর :- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা "শেষ লেখা" কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা "রূপনারানের কূলে" কবিতাটি কবির অন্তিম জীবন পর্বের কবিতা। কবিতাটি গীতি কবিতার মতো ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও সত্য দর্শনের কাব্যরূপ।
স্বপ্নের মায়াকাজল পরে নয়, দুঃখের কঠোর তপস্যার মধ্য দিয়ে জীবনের সত্য রূপকে চিনে নিতে হয়। দুঃখ আগুনে পুড়লে পরেই জগত ও জীবনের সত্য রূপকে উপলব্ধি করা যায়। দুঃখের অভিঘাতেই জীবনে প্রকৃত আনন্দকে খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যের স্বরূপ উন্মোচিত হওয়ায় কবি বুঝলেন - এতদিন যে জীবন ও জগতকে স্বপ্ন বলে মনে হয়েছিল, তা আসলে কোন স্বপ্নের জগত নয়, রোমান্টিক কল্পজগৎ নয়। তাই কবি বললেন - " রূপনারানের কূলে/ জেগে উঠিলাম,/ জানিলাম এ জগত/ স্বপ্ন নয়।"
রবীন্দ্রনাথ মর্ত্য প্রেমিক ও মানব প্রেমিক কবি। জগত ও জীবনবিমুখতা তার কবিচরিত্র বিরোধী। তিনি জীবনের মতো মৃত্যুও পরিপূর্ণভাবে ভোগ করেছেন। অনেক তপস্যা, অনেক দুঃখ, অনেক আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার পর কবি উপলব্ধি করলেন - "Our sweetest songs are those that tell of saddest thoughts".
এ জীবন স্বপ্ন থেকে, মায়া জগত থেকে অনেক দূরের জগত সত্য জগত। ' আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা' র মধ্য দিয়ে কবি এই সত্যকে লাভ করলেন। দুঃখের তপস্যা করা খুব কঠিন কাজ, তবুও সেই কাজটাই কবি করলেন, কেন - না - "সে কখনো করে না বঞ্চনা।" তাই কবি সত্যের দারুন মূল্য লাভ করতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হলেও আনন্দ পেয়েছেন। তাই কবি জড়িয়ে ধরলেন কঠোরকে, মৃত্যু সম্পর্কে হলেন ভয় শূণ্য, হৃদয় হলো আলোকোজ্জ্বল, জীবনে পেলেন নতুন প্রাণ। রূপনারানের কূল কবির দীর্ঘদিনের বদলে দিয়ে এক নতুন মানুষের পরিণত করল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন