স্নেহের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা, "Rajesh Sir Tutorial" এ তোমাদের স্বাগত জানাই। আশা করি তোমাদের পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছে। আজ এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায় "মুঘল সাম্রাজ্য" অংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি সম্পর্কে। এই অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন - উত্তরগুলি তোমাদের আগামী পরীক্ষায় MCQ, SAQ এবং শূন্যস্থান পূরণ বা সত্য মিথ্যা নির্ণয় বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে। এছাড়া যে অনুশীলনী প্রশ্নোত্তর গুলি দেওয়া হল সেগুলি আগামী পরীক্ষায় তোমাদের অবশ্যই আসবে। তাই তোমাদের আগামী পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে এই প্রশ্নোত্তর গুলি অতি অবশ্যই করে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলের দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষায় এই প্রশ্নোত্তরগুলি আসে। এ বিষয়ে আরেকটি কথা তোমাদের জানিয়ে রাখি, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর এবং পরীক্ষার আগে সাজেশন তোমরা এই Rajesh Sir Tutorial পেজ থেকে পেয়ে যাবে। শ্রেণি :- সপ্তম শ্রেণি বিষয় :- ইতি...
"সিরাজদ্দৌলা" (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Sirajuddaula Question and Answer : "সিরাজদ্দৌলা" (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Sirajuddaula Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – WBBSE Class 10 Bengali Sirajuddaula Question and Answer, Suggestion, Notes – সিরাজদ্দৌলা (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত থেকে রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 10th Ten X Bengali Examination – পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তোমরা যারা "সিরাজদ্দৌলা (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Sirajuddaula Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো। আশা করি এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্ন এর মধ্য থেকেই আসবে।
সিরাজদ্দৌলা (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Sirajuddaula Question and Answer
প্রতিটি প্রশ্নের মান 4
১ ) "বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন।" কে কাদের কাছে এই সাহায্য চেয়েছেন? তিনি কেন সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন?
উত্তর :- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের "সিরাজদৌল্লা" নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা সিপাহশালার মীরজাফর, রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ প্রমুখ বিশিষ্ট সভা সদের কাছে বাংলার মান মর্যাদা রক্ষার জন্য সব রকমের সাহায্য চেয়েছেন।
নাট্যাংশ অনুসারে সিরাজ যত অনাচার করে থাকুক না কেন বাংলার প্রতি তার আবেগ ছিল পরিপূর্ণ। নবাবের বিশিষ্ট সভাসদেরা নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সকলে মিলে চক্রান্ত করে নবাব সিরাজ দৌলাকে বাংলার মসনদ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিচক্ষণ সিরাজ জানেন যে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নবাব বাংলার স্বার্থে তাদের শাস্তি না দিয়ে এক নতুন সমীকরণ উপস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন।
বাংলার মান মর্যাদা ও স্বাধীনতার কথা বলে তাদের সুপ্ত বিবেককে আঘাত করে নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করেন সিরাজ। সিরাজ স্পষ্ট বুঝেছিলেন ইংরেজদের সাথে টক্কর দিতে গেলেই চাই সমবেত প্রতিরোধ এবং সর্বাত্মক আক্রমণ। আগামী দিনে যদি মীরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠরা সিরাজের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তবেই সিরাজ অজেয় হয়ে উঠবেন। তাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঐক্যমতের প্রয়াসে সুপ্ত বিবেকে সুড়সুড়ি দিয়ে বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের নিজের পক্ষে আনতে চেয়েছেন সিরাজ।
Search:- www rajeshsir.in
২ ) "জাতির সৌভাগ্য সূর্য আজ অস্তাচলগামী" - এখানে কোন জাতির কথা বলা হয়েছে? তার সৌভাগ্য সূর্য অস্তাচলগামী কেন?
উত্তর :- প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের "সিরাজদৌল্লা" নাট্যাংশে জাতি বলতে বাঙালি জাতির কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রূপে ভারতে প্রবেশ করে ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন। বণিকের মানদন্ড ধীরে ধীরে রাজদন্ডে পরিণত হতে চলে। বর্তমান বাংলার পরিস্থিতিতে সিরাজ ঘরে বাইরে চক্রান্তের স্বীকার। একদিকে সভা সদদের বিশ্বাসঘাতকতা, অন্যদিকে ইংরেজদের আগ্রাসী মনোভাব পলাশী প্রান্তরে বাংলার স্বাধীন আকাশে যে দুর্যোগের ঘনঘটা তা সিরাজ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায় দুর্লভ ও মীরজাফরদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। নবাব হয়তো ভেবেছিলেন পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকলকে একত্রিত করা যাবে। হয়তো মীরজাফর, জগৎ শেঠের ব্যক্তিগত শত্রুতা, স্বাদেশিকতা ও স্বজাত্যবোধের উর্ধ্বে উঠতে পারবে না। তাই তাদের সাহায্য প্রার্থনা করতে গিয়ে বাংলার মান-মর্যাদা এবং স্বাধীনতা রক্ষার দোহাই দেন। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য সূর্যের অস্তাচলে গমন রোধ করার উদ্দেশ্যে নবাবের এই আবেদন।
কিন্তু হায়! পলাশী প্রান্তরে বাঙালির তথা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য আগামী দুশো বছরের জন্য চিরতরে আস্তাচলে যায়।
৩) "জানিনা, আজ কার রক্ত সে চায় পলাশি, রাক্ষসী পলাশি" - আলোচ্য অংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :- বর্তমান নদীয়া জেলায় অবস্থিত ভাগীরথীর পূর্ব তীরস্থ এক ক্ষুদ্র গ্রাম পলাশি। প্রবাদ আছে - একসময় এই স্থান লক্ষ লক্ষ পলাশ ফুলে লাল হয়ে অগ্নিবর্ণ ধারণ করত। সেই থেকেই এই গ্রামের নাম পলাশি।
বাংলাকে ইংরেজ অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে এবং তাদের একাধিপত্যকে খর্ব করার জন্য ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের স্থান পলাশী প্রান্তর। সিরাজ জানতেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তার পক্ষে বিজয়ী হওয়া খুব কঠিন। কারণ জগত শেঠ, মীরজাফর, রাজবল্লভ প্রমুখেরা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তার ওপর সামনে প্রবল প্রতিপক্ষ ইংরেজ। ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনেও সিরাজ দোলাচলে বা অস্থিরতায় ভুগছেন। যুদ্ধের পরিনাম পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোন দিকেই হতে পারে। এই যুদ্ধ রক্তক্ষয়ী দেখতে পেয়েছিলেন সিরাজ। পলাশী প্রান্তর যেখানে এককালে পলাশ ফুলে রাঙিয়ে তুলত দিগন্ত, সেখানে পলাশীর যুদ্ধ রক্তে লাল করে তুলবে সেই প্রান্তরকে। লক্ষ লক্ষ পলাশ ফুলের রঙে রাঙ্গা রক্তবর্ণ পলাশী হয়তো এবার বাস্তবিকভাবেই রঙিন হবে মানুষের রক্তে। কারণ - যুদ্ধ যে কড়া নাড়ছে। নবাব জানান পলাশের রঙে রাঙা পলাশীর লালের নেশা আজও ঘোচেনি। সে আজও রক্তের পিয়াসি। কিন্তু কার রক্তে এই পিপাসা মিটবে তা সিরাজ জানেন না। এই মানসিক টানাপোড়েন এবং চরম লাঞ্ছনায় হতাশ হয়ে তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে পলাশি, রাক্ষসী পলাশি।
৪) "বাংলা শুধু হিন্দু নয় বা বাংলা শুধু মুসলমানের নয়, মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভূমি, গুলবাগ এই বাংলা" - বক্তা কে? আলোচ্য অংশটির তাৎপর্য কি?
উত্তর :- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত "সিরাজদ্দৌলা" নাটকে প্রশ্নোদ্ধৃত এই উক্তিটির বক্তা হলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা।
সিরাজের বাংলার মসনদে বসা ১৫ মাস তখন অতিক্রান্ত হয়নি। অথচ মসনদ প্রাপ্তির কারণেই ঘরে বাইরে তাকে নানা কারণে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়। তিনি লক্ষ্য করেন, ইংরেজরা বণিকের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করার চেষ্টা করছে। অজস্র সৈন্য সমাবেশ, কোম্পানির আগ্রাসন নীতি, কলকাতা দুর্গকে দুর্ভেদ্য করার প্রয়াস সিরাজকে স্তম্ভিত করে তোলে। তিনি আরো লক্ষ্য করেন, তাঁরই দরবারে কিছু প্রতিনিধি ইংরেজদের সঙ্গে যুক্ত। বিচক্ষণ নবাব অনুভব করেন যে ইংরেজরা তাদের বিষ নিঃশ্বাস ছড়াচ্ছে এবং এই ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে তার দরবার পর্যন্ত।
একদিকে তীব্র ষড়যন্ত্রকারী মীরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভদের অবস্থান তেমনই অন্যদিকে মরুদ্যানের মতো গোলাম হোসেন, মোহনলাল, মীর মদন প্রমূখ ব্যক্তিদের নিয়ে সিরাজের ক্ষমতা বলয়। কিন্তু বাংলার দুর্দিনে সকলকে একত্রিত করতে না পারলে বিপদ যে আসন্ন তা সিরাজ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে সিরাজ হিন্দু - মুসলমানের মিলিত শক্তির প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। ইংরেজ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি চেয়েছিলেন বাংলা হোক সকল ধর্মের মানুষের প্রাণকেন্দ্র, সবার ভালোবাসার সম্মেলন দিয়েই বাংলার রক্ষা সম্ভব। তাই হিংসাশ্রয়ীদের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সকলকে এক ছাতার তলায় ফিরিয়ে এনে একত্রে লড়তে চেয়েছিলেন সিরাজ।
৫) "আমার এই অক্ষমতার জন্য আমাকে ক্ষমা করো" - এই মন্তব্যের কারণ কি? এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল? ২+২
উত্তর :- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত "সিরাজদ্দৌলা" নাট্যাংশে ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় ফরাসি প্রতিনিধি মসিঁয়ে লা সিরাজের দরবারে উপস্থিত হন। ইংরেজরা সিরাজের অনুমতি না নিয়েই চন্দননগর আক্রমণ ও অধিকার করেছেন। তাই বিচারের আশায় ফরাসিরা নবাবের শরণাপন্ন কিন্তু সিরাজ ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও তিনি জানান যে ইংরেজদের সঙ্গে কলকাতা অধিকারের লড়াই এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সাথে যুদ্ধে তার প্রচুর অর্থব্যয় ও লোক ক্ষয় হয়েছে। এমনকি তার মন্ত্রীমন্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতি নয়। এই অবস্থায় সিরাজ ফরাসিদের সাহায্য করা সম্ভব নয় জানিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
এর উত্তরই মসিঁয়ে লা সিরাজের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন এবং সিরাজের কথা শুনে তিনি যে আন্তরিকভাবে দুঃখিত তাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন ইচ্ছে না থাকলেও ফরাসিদেরকে তাদের ভালোবাসার দেশ ছাড়তে হওয়ায় তারা নিজেরাও পীড়িত। তিনি অত্যন্ত কষ্টেও জানিয়েছিলেন যে, নবাব তাদের সাহায্য না করলে দেশ ছাড়তে তারা বাধ্য হবেন। একই সঙ্গে মসিঁয়ে লা নবাবকে তার ভারী বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। বাংলার আকাশে যে বিপদের মেঘ জমতে শুরু করেছে তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন মসিঁয়ে লা।
সিরাজ ও বোঝেন যে কি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে তিনি অবস্থান করছেন। কিন্তু তিনি নিরুপায়। আলোচ্য বক্তব্যে সিরাজের সেই অসহায়তায় ফুটে উঠেছে।
৬) সিরাজদৌল্লা নাট্যাংশে লুৎফার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত "সিরাজদ্দৌলা" শীর্ষক নাট্যাংশে যে কয়েকটি চরিত্রের ডালি সাজিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লুৎফান্নেসা বেগম। লুৎফা কথার অর্থ হলো "প্রিয়তমা"। লুৎফাউন্নেসা ছিলেন বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার ভাগ্য বিড়ম্বিত নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রিয়তমা পত্নী। নাট্যাংশে তার চরিত্রের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য গুলি ফুটে উঠেছে, তা হল -
প্রিয়তমা পত্নী :- নবাবের জীবনে একাধিক নারী এলেও লুৎফান্নেসা ছিলেন সবচেয়ে প্রিয়। সুখে - দুঃখে তিনিই ছিলেন নবাবের একমাত্র সঙ্গী। যুদ্ধ - ষড়যন্ত্র - কুৎসা - দ্বেষ ও হিংসায় সিরাজ যখন ক্ষতবিক্ষত তখন তার যোগ্য সহধর্মিনী ছিলেন লুৎফা।
স্বামী প্রেমে উজ্জ্বল :- ঘসেটি যখন প্রতিহিংসার বসে সিরাজকে বাক্যবানে ক্ষতবিক্ষত করেছেন তখনই লুৎফা তাঁকে বাধা দিয়ে বলেছেন যেন তিনি এমন কু বাক্য প্রয়োগ না করেন। সিরাজকে মানসিক দিক থেকে বাঁচাতে লুৎফার পরামর্শ :- "জাহাপনা! ওকে ওর প্রাসাদে ফিরে যেতে দিন।"এর থেকে লুৎফার সহৃদয়তা ও স্বামীর প্রতি প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।
সংবেদনশীলতা :- লুৎফা অত্যন্ত সংবেদনশীল এক চরিত্র। দুর্বল হৃদয়ের সিরাজের চোখে জল দেখে লুৎফা সংবেদনশীলতায় বলেন - "আপনার চোখে জল, আমি যে সইতে পারি না।"বলা বাহুল্য, লুৎফা স্বামীর মঙ্গল চিন্তায় অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন।
বিষাদের নম্র প্রতিমা :- অদ্ভুত এক বিষাদ লুৎফাকে ঘিরে রেখেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সিরাজের চারপাশে দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। এমনকি চরম সত্য জেনেও ঘসেটিকে মায়ের আসনে বসাতে চেয়েছেন তিনি।
ঐ
নবাবের মরজীবনে মরুদ্যান :- নবাবের মরুময় জীবনে মরুদ্যানের এক পশলা বৃষ্টি হলেন লুৎফা। যিনি নবাবকে প্রতিমুহূর্তে সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন।
এক কথায় সব নিয়ে লুৎফার চরিত্র বাস্তবতায় উত্তীর্ণ। তার চরিত্রের মধ্যে মমত্ববোধ, অকৃত্রিম ভালবাসা, সহৃদয়তা এবং বিচক্ষণতার সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়।
৭) "সিরাজদ্দৌলা" নাট্যাংশে ঘসেটি বেগমের চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তর :- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত "সিরাজদ্দৌলা" নাট্যাংশ ঘসেটি বেগম এক অদ্ভুত ও প্রধানতমা চরিত্র। হিংসার বিচ্ছুরণ ও সিরাজের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন এ চরিত্রটি বিশেষ স্থান লাভ করেছে।
ঘসেটির পরিচয় :- ঘসেটি ছিলেন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব আলীবর্দী খাঁ - এর জ্যৈষ্ঠা কন্যা, তথা সিরাজের মাসি। নিজে মহিলা বলে সিংহাসনে আরোহন করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পালিত পুত্রকে সিংহাসনে বসিয়ে বক্র পথে নিজেই শাসনভার হাতে নিতে। কিন্তু তাঁর কোন আশায় পূর্ণ হয়নি। উল্টে ছোটবোন আমিনার পুত্র সিরাজ সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ঘসেটির ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে সিরাজ তাকে নজর বন্দি করেন
ঘসেটির স্বার্থান্বেষী ও প্রতিহিংসা পরায়ন চরিত্র :- ঘসেটি বেগমের প্রথম সংলাপ - "ওখানে কি দেখছো বিবেকের দিকে চেয়ে দেখো"। একজন মাতৃসমা নারীর মুখে সিরাজের প্রতি এই উক্তি সমীচীন নয়। ঘসেটি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তাঁর মধ্যে ছিল রাজ ক্ষমতা লাভের তীব্র দুরাশা। সিরাজ তাঁকে মা বলে সম্বোধন করলেও তাঁর মুখ থেকে শুধু কটু বাক্যই বেরতে থাকে। এমনকি সিরাজের মৃত্যু কামনা করতেও তিনি পিছপা হননি। ঘসেটির উক্তিতে প্রতিহিংসা পরায়ণতা স্পষ্ট - " আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই - আছে শুধু প্রতিহিংসা"।
প্রতিহিংসা পরায়ণা এই মহিলা নবাবের কান্নাকে ব্যঙ্গ করে পলাশী প্রান্তরে নবাবের অন্তিম পরিণতি কামনা করেন। এমনকি লুৎফা তাঁকে মা বলে সম্বোধন করলেও তিনি একইভাবে লুৎফাকে অভিসম্পাত করেছেন। জীবন যুদ্ধে বারবার অসফল হয়ে ঘসেটি বেগম দয়া - মায়া হীন এক ষড়যন্ত্রকারী রূপে প্রকটিত হয়েছেন। নাট্যাংশে ঘসেটি বেগমই একমাত্র চরিত্র যার সাময়িকভাবেও মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি, নাট্যাংশের অন্যান্য চরিত্র গুলির মধ্যে সাময়িকভাবে হলেও মানসিকতার পরিবর্তন দেখা গেছে। কিন্তু ঘসিটি বেগম একরোখা, প্রতিহিংসা পরায়ণ ও কটুভাষীই হয়ে গেছে।
৮) "সিরাজদ্দৌলা" - নাট্যাংশে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :- ষড়যন্ত্র, সন্দেহ, ঈর্ষা আর গোপন চক্রান্তের রন্ধ পথে অতিবাহিত হয়েছিল বাংলার তরুন নবাব সিরাজদৌলার প্রতিটি দিন। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের "সিরাজদ্দৌলা" নাট্যাংশের অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের ন্যায় বহুগুণ সমন্বিত হয়ে ধরা দিয়েছেন ট্র্যাজিক নায়ক সিরাজ। তার চরিত্রের যে গুণগুলি সহজে আমাদের আকৃষ্ট করে, তা হলো -
দেশাত্মবোধ :- বাংলার মান ও মর্যাদা রক্ষায় একতন্ত্র সৈনিক হিসেবে সিরাজদৌলা চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল। তাঁর কথায় "বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয় - মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভূমি, গুলবাগ এই বাংলা"। সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, এই জাতীয়তাবাদই সিরাজকে নায়ক করেছে। এমনকি বাংলার দুঃসময়ে তিনি অধঃস্তনের কাছে ক্ষমা চাইতেও পিছপা হননি।
রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব :- নাট্যাংশের প্রথমেই দেখা যায় নবাব সিরাজদ্দৌলা মীরজাফর, রায়দুর্লভ ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যাক্তিদের অনুনয় বিনয় করছেন। রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবে তিনি ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও কঠোর হতে পারেননি। সব সময়ই এক উৎকণ্ঠা তাকে রাহুর মতো তাড়া করত। তাই ষড়যন্ত্রে কন্টকীত নবাব প্রতিনিয়ত অপমানিত ও অপদস্থ হয়েছেন।
আত্মসমালোচনা :- আত্মসমালোচনা নবাব চরিত্রের একটি বড় দিক। নবাব বুঝেছিলেন ষড়যন্ত্রী যেমন ভুল করেছে, তেমনই অনেক ত্রুটি আছে তাঁর নিজেরও। তাই বাংলার বিপদের দিনে নিজের ভুল স্বীকার করতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হননি।
বিনয়ী :- ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা প্রতিকারের আশায় সিরাজের কাছে গেলে সিরাজ তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়েছেন এবং সেই জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। একজন নবাব হয়ে এই ক্ষমা প্রার্থনা তার বিনয়ের পরিচয় বহন করে।
আবেগপ্রবণ :- নাট্যাংশে সিরাজের ঐতিহাসিক, রাজতান্ত্রিক কথা প্রধান হলেও স্ত্রী লুৎফার সঙ্গে কথা বলার সময় শোনা যায় আবেগঘন কথা। আবেগ তাড়িত হয়ে কখনো তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন এবং বিপদের সময় তাঁর সঙ্গ ত্যাগ না করে সেই সাহায্য ভিক্ষা করেন ষড়যন্ত্রীদের কাছে। নাট্যাংশে চরিত্রটিকে অনেকবার আবেগ তাড়িত হতে দেখা যায়।
উদারতা ও আদর্শের সমন্বয় :- সিরাজ চরিত্রের মধ্যে উদারতা ও আদর্শের এক সমন্বয় ছিল। তাই মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষায় ও মীরজাফরের উদ্দেশ্যে অনায়াসে বলতে পেরেছেন - "আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন!" এমনকি জয় লাভ করার পর সিংহাসন ছেড়ে দিতেও তিনি রাজি ছিলেন। এভাবে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে।
যদিও, এই সমস্ত আদর্শের আড়ালে সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত এক সিরাজকে পাওয়া যায়। আপোষ হীনতায়, দূরদর্শিতায়, আত্মসমালোচনায় এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় নবাব সিরাজদৌলা এক রক্ত মাংসের চরিত্র হয়ে ওঠেছে। এবং অন্যকে আপন করার চেষ্টায় মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এর দৃঢ়তায় চরিত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে।
৯) মনে হয়, ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ- সঞ্চালনে ভূমিকম্প। – কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর :- বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে, নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফাউন্নিসা ঘসেটি বেগম সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।
এরূপ মন্তব্যের কারণ – ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সিরাজ যখন বিচলিত, সেই সময় নবাবের মাসি ঘসেটি রাজদরবারে প্রবেশ করেন। তারপর একের পর এক তীব্র বাক্যবাণে তিনি সিরাজকে জর্জরিত করতে থাকেন। ঘসেটির প্রতিটি বাক্যই বিষ-মাখানো তিরের মতো যেমন সিরাজের হৃদয়ে বিঁধে যায়, তেমনই সেখানে উপস্থিত সিরাজের পত্নী লুৎফার অন্তরকেও ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি বুঝতে পারেন ঘসেটি সাক্ষাৎ প্রতিহিংসার প্রতিমূর্তি, যিনি লুৎফার স্বামী সিরাজেরও শওকত জঙ্গের মতোই নির্মম পরিণতি চান। ঘসেটি বলেন, চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না। বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে। লুৎফা উপলব্ধি করেন ঘসেটির সর্বাঙ্গে অতৃপ্তির জ্বালা, নিশ্বাসে বিষ, দৃষ্টিতে আগুন আর অঙ্গসঞ্চালনে ভূমিকম্পের অনুরণন। ঘসেটিকে সহ্য করতে না পেরে লুৎফাউন্নিসা তাঁকে অবিলম্বে মতিঝিলে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। উক্তিটির মধ্যে ঘসেটি সম্পর্কে লুৎফার ভীতি এবং আশঙ্কাই প্রকাশ পেয়েছে
১০) 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজের দেশপ্রেমের পরিচয় দাও।
উত্তর :- বিখ্যাত নাট্যকার "শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত” তাঁর "সিরাজদ্দৌলা" নাট্যাংশে জাতীয় রাজনীতির এক অস্থির সময়কে পটভূমি রূপে নির্বাচন করেছেন। যখন দেশ দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী বিভেদে বিভেদগ্রস্থ; যখন মুসলিম লীগের প্রচারে দেশ বিভাজনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখন নাট্যকার সিরাজদ্দোউলা চরিত্রটির মধ্য দিয়ে সকল দেশবাসীকে স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে জাগরিত করতে চেয়েছেন।
সিরাজের দেশপ্রেমের পরিচয়ঃ
মার্কিন রাজনীতিবিদ A Stvenson দেশপ্রেম সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন- "Patriotism is not short, frenzied outburst of emotion, but the tranquil and steady dedication of a lifetime."
স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার চরিত্রেও আমরা তাঁর সত্যানুভূতি, দুর্বার জীবনবোধ, অখন্ড সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্তের পরিচয় লাভ করি। তাই সিরাজদ্দৌলার কন্ঠে আমরা শুনতে পাই- "বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্ব রকমে আমাকে সাহায্য করুন।"
সমগ্র বাংলার সার্বিক মঙ্গলসাধনাকে লক্ষ্য রূপে নির্বাচন করেই যেনো নাট্যকার সিরাজদ্দৌলা চিত্রটির নির্মাণ করেছেন। আর তাই মাতৃভূমি বাংলাকে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িক স্বার্থের সংকীর্ণ গন্ডীতে সিরাজ কখনোই আবদ্ধ করতে চান না। তিনি বিপদকালে তার সভাসদদের উদ্দেশ্যে তাই দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন- "বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়- মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”
সংকীর্ণ দলাদলি, পারস্পরিক দোষারোপ ও স্বার্থপরতার উর্দ্ধে সিরাজদ্দৌলার মধ্য দিয়ে আমরা এক প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পরিচয় পেয়ে থাকি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন