স্নেহের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা, "Rajesh Sir Tutorial" এ তোমাদের স্বাগত জানাই। আশা করি তোমাদের পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছে। আজ এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায় "মুঘল সাম্রাজ্য" অংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি সম্পর্কে। এই অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন - উত্তরগুলি তোমাদের আগামী পরীক্ষায় MCQ, SAQ এবং শূন্যস্থান পূরণ বা সত্য মিথ্যা নির্ণয় বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে। এছাড়া যে অনুশীলনী প্রশ্নোত্তর গুলি দেওয়া হল সেগুলি আগামী পরীক্ষায় তোমাদের অবশ্যই আসবে। তাই তোমাদের আগামী পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে এই প্রশ্নোত্তর গুলি অতি অবশ্যই করে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলের দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষায় এই প্রশ্নোত্তরগুলি আসে। এ বিষয়ে আরেকটি কথা তোমাদের জানিয়ে রাখি, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর এবং পরীক্ষার আগে সাজেশন তোমরা এই Rajesh Sir Tutorial পেজ থেকে পেয়ে যাবে। শ্রেণি :- সপ্তম শ্রেণি বিষয় :- ইতি...

মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
( Madhyamik History Question and Answer))
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) | Madhyamik
History Question and Answer ( 5th Chapter )
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর : বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( ১৯ শতকের মধ্যভাগ
থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ( পঞ্চম অধ্যায় )
Madhyamik History Question and Answer : মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও
উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) :- অতি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যাখ্যামূলক উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর ও বিশ্লেষণমূলক উত্তর ভিত্তিক
প্রশ্নোত্তর | Madhyamik History 5th Chapter Question and Answer নিচে দেওয়া
হলো।
এই দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – WBBSE Class 10 History Question and
Answer, Suggestion, Notes – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( ১৯ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ
শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) থেকে এই ৮
নম্বরের এবং ৪ নম্বরের প্রশ্নগুলো আগামী ( West Bengal Class 10th ( X )History
Examination ) – পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য Rajesh Sir Tutorial এর এই
প্রশ্নোত্তর গুলি অতি অবশ্যই অনুশীলন করবে।
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
( Madhyamik History Question and Answer))
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) | Madhyamik
History Question and Answer ( 5th Chapter )
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর : বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( ১৯ শতকের মধ্যভাগ
থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ( পঞ্চম অধ্যায় )
Madhyamik History Question and Answer : মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও
উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) :- অতি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যাখ্যামূলক উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর ও বিশ্লেষণমূলক উত্তর ভিত্তিক
প্রশ্নোত্তর | Madhyamik History 5th Chapter Question and Answer নিচে দেওয়া
হলো।
পঞ্চম অধ্যায়
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
মাধ্যমিক ইতিহাস
প্রতিটি প্রশ্নের মান ৪
প্রশ্ন :- (১) বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা বা মুদ্রণ শিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে
আলোচনা করো।
উত্তর :- ভূমিকা :- আধুনিক যুগে উত্তরণের একটি উপাদান হল আধুনিক শিক্ষা, আর
আধুনিক শিক্ষার অন্যতম উপাদান হলো ছাপাখানা। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বাংলায়
ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয় এবং উনিশ শতকে বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ লাভ ঘটে।
আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার :- জার্মানির জোহান গুটেনবার্গ ১৪৫৪
খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তারপর প্রায় এক শতাব্দীর পরে
ভারতে মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ঘটে পর্তুগিজদের হাত ধরে। পর্তুগিজরা প্রথমে ১৫৫৬
খ্রিস্টাব্দে ভারতের গোয়ায় মুদ্রণ যন্ত্র স্থাপন করেন।
বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের প্রতিষ্ঠা :- পর্তুগিজ মিশনারিরা অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে
বাংলায় আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র নিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস
অগাস্টাস হিকি কলকাতায় এবং 1778 খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স চুঁচুড়ায়
ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলা অক্ষরের সূচনা :- বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চার্লস উইলকিন্স
প্রথম বাংলা অক্ষর তৈরি করেন। পরবর্তীকালে হুগলি জেলার সুদক্ষ শিল্পী পঞ্চানন
কর্মকার বাংলা অক্ষরের উন্নত টাইপ তৈরি করেন। চার্লস উইলকিন্স তৎকালীন গভর্নর
জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর নির্দেশে হ্যালহেডের ব্যাকরণ ( A Grammar of the
Bengal Language ) চুঁচুড়ার ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করেন।
পূর্ববঙ্গে ছাপাখানা :- ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বঙ্গে প্রথম রংপুরে এবং ১৮৬০
খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ শতকের শেষ ভাগে বাংলার
বিভিন্ন প্রান্তে ছাপাখানার প্রসার ঘটে।
পরবর্তীকালে পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি বাংলার অক্ষরে উইলিয়াম কেরি বাইবেলের অনুবাদ
করেন। এই বাংলা হরফের আবিষ্কার বাংলার ছাপাখানার জগতে এক নবজাগরণের সূচনা করে।
প্রশ্ন :- (২) টীকা লিখ :- শ্রীরামপুর প্রেস।
অথবা
বাংলার ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর প্রেসের অবদান কি?
উত্তর :- বাংলাদেশে শ্রীরামপুর মিশনারীদের বহু কৃতিত্বের নিদর্শন আছে। এইসব
কৃতিত্বের মধ্যে অন্যতম হলো ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশনা। এই সময় একটি
উল্লেখযোগ্য ছাপাখানা ছিল শ্রীরামপুর প্রেস। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা মুদ্রণের ইতিহাস কে সমৃদ্ধ করেছে মিশনের প্রকাশনা।
প্রেস প্রতিষ্ঠা :- শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে খ্যাত উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম
ওয়ার্ড এবং মার্শম্যান এই তিন খ্রিস্টান মিশনারি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে
একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি শ্রীরামপুর প্রেস নামে খ্যাত। ১৮২০
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই মিশনের ছাপাখানার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ টি।
মুদ্রণ :- শ্রীরামপুর মিশন ছাপাখানায় প্রথমে ইংরেজি ভাষায় কাঠের হরফের ব্লক
তৈরি করেন। এর ফলে বাংলায় ছাপাখানার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
পরবর্তীকালে ধাতুর ইংরেজি ও বাংলা হরফ তৈরি করা হয়। এই সময় পঞ্চানন কর্মকার
ছিলেন বাংলা হরফের অন্যতম কারিগর। কেরি সাহেব তাকে নিয়োগ করেন এবং মিশনের
ছাপাখানার কম্পোজিটার পদে নিযুক্ত হন গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য।
মিশন প্রেসের কার্যাবলী :- এই প্রেস থেকে নানা বিষয়ে নানা ধরনের বই ও
পত্র-পত্রিকা ছাপানো হতো। নিউ টেস্টামেন্ট ( বাইবেল বাংলা ভাষায় অনুবাদ ) এখান
থেকেই ছাপানো হয়। এছাড়াও এখান থেকে ২৬ টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল ছাপানো হয়।
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই প্রেস থেকে ৪০ টি ভাষায় দু হাজারেরও বেশি বই ছাপা
হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের "বত্রিশ সিংহাসন",
কাশীরাম দাসের "মহাভারত", কৃত্তিবাসের "রামায়ণ" ইত্যাদি। এছাড়া সমাচার দর্পণ,
দিকদর্শন প্রভৃতি সংবাদপত্র এখান থেকে প্রকাশিত হতে থাকে।
মূল্যায়ন :- এইভাবে উনিশ শতকে শ্রীরামপুর প্রেসের হাত ধরে বাংলায় ছাপাখানার
যেমন শ্রী বৃদ্ধি ঘটে তেমনি শিক্ষা দীক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এক নব
দিগন্তের সূচনা হয়।
প্রশ্ন :- (৩) বাংলা ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান আলোচনা
করো।
অথবা, টীকা লিখ : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং ইউ রায় এন্ড সন্স।
ভূমিকা :- ছাপাখানা বা মুদ্রণ শিল্পের মৌলিক অবদানের জন্য উপেন্দ্রকিশোর
রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত "ইউ রায় এন্ড সন্স" আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে
আছে। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে
উনবিংশ শতকে মুদ্রণ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হন।
প্রতিষ্ঠা :- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিদেশ থেকে আধুনিক
উন্নত মুদ্রণ যন্ত্র এনে কলকাতায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ইউ এন রায়
আর্টিস্ট। পরবর্তীকালে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ইউ এন রায় এন্ড সন্স।
হাফটোন ব্লক তৈরি :- উপেন্দ্রকিশোর তার ছাপাখানায় কাঠের পরিবর্তে তামা ও দস্তার
অক্ষর বা ছবি খোদাই করে মুদ্রণের প্রয়োজনীয় ব্লক তৈরি করেন। তিনি অন্ধকার ঘরে
বসে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ লক্ষ্য করে ব্লক তৈরির সূত্র উৎপাদন করেন।
ব্যবসায়িক উদ্যোগ :- ইউ এন রায় এন্ড সন্স থেকে প্রথমেই তিনি নিজের লেখা শিশু
সাহিত্য "টুনটুনির বই" ছাপা শুরু করেন। ক্রমে এখান থেকে মুদ্রিত হতে থাকে "ছোটদের
রামায়ণ", রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "জীবনস্মৃতি" , "ঠাকুরমার ঝুলি", "গুপী গাইন বাঘা
বাইন" ও "সন্দেশ পত্রিকা" প্রভৃতি। এছাড়া স্বদেশী যুগে জাতীয় নেতাদের ছবি ও
অসংখ্য ব্যাঙ্গাত্মক লেখা এখান থেকে ছাপা হতে থাকে।
মূল্যায়ন :- এইভাবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাত ধরে বাংলার প্রযুক্তিবিজ্ঞান,
ফটোগ্রাফি ও সাহিত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে। সর্বোপরি বাংলায় দেশীয় উদ্যোগে
ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি হয়।
প্রশ্ন :- (৪) টীকা লিখ :- বসু বিজ্ঞান মন্দির।
সূচনা :- বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ব্যক্তি ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু।
তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান "বসু বিজ্ঞান মন্দির" যা "বোস ইনস্টিটিউট" নামে
পরিচিত।
প্রতিষ্ঠা :- জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর "বসু বিজ্ঞান
মন্দির" প্রতিষ্ঠা করেন। যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং জ্ঞানের
প্রসার ঘটানো। এই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটি সমকালীন প্রথম সারির গবেষণা কেন্দ্র হয়ে
উঠেছিল।
অবদান :- জগদীশচন্দ্র বসু চেয়েছিলেন এখানকার গবেষণা হবে বিশ্বমানের। এখানে
পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, মাইক্রো বায়োলজি, বায়োফিজিক্স, বায়োকেমিস্ট্রি
প্রভৃতি আধুনিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলির চর্চা ও গবেষণার ব্যবস্থা ছিল। তিনি মনে
করতেন এই বিজ্ঞান মন্দিরে যেসব আবিষ্কার হবে তার সুফলে যেন সবার সমান অধিকার
থাকে।
বসু বিজ্ঞান মন্দির বিভিন্ন বিষয়ে তার অবদান রেখেছে। কলেরা রোগের টিকা
আবিষ্কারে, উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণে এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা নিয়েছিল। এখানে জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার
করেন।আধুনিক মলিকিউলার বায়োলজির সূচনা হয় এখান থেকেই। তিনি এখনকার গবেষণা গুলি
প্রকাশের জন্য পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে বসু বিজ্ঞান মন্দির একটি
অন্যতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
মূল্যায়ন :- বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞান - বিষয়ক গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চার
ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয়
সরকার এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়েছেন।
প্রশ্ন :- (৫) চিকিৎসা বিদ্যা চর্চায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- উনিশ শতকের সূচনা লগ্নে ভারতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেশীয় ব্যবস্থার প্রচলন
ছিল। পরবর্তীকালে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে ভারতে তথা
বাংলায় আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পথ চলা শুরু হয়।
প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ :- মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ডঃ মধুসূদন গুপ্ত
শারীরবিদ্যা ও শল্য চিকিৎসকের প্রশিক্ষক পদে কাজ শুরু করেন। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে
তিনি সর্বপ্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন, যা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নব
দিগন্তের উন্মোচন করে। এই ঘটনা কলকাতায় আলোড়ন সৃষ্টি করে কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ
এই ঘটনা ভালোভাবে মেনে নেয়নি।
ইউরোপীয় চিকিৎসা বিদ্যা :- কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর দেশীয় চিকিৎসা
বিদ্যার পরিবর্তে ইউরোপের উন্নত চিকিৎসা বিদ্যায় শিক্ষাদান শুরু হয়। এই মেডিকেল
কলেজ এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় কলেজ যেখানে আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা শেখানো হতো।
প্রথম ব্যাচ :- এই কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচে পাস করেন উমাচরণ শেঠ, রাজ কৃষ্ণ দে,
দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন হাসপাতালে
ডাক্তার হিসেবে তাঁরা নিযুক্ত হন।
নবযুগ :- কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যার ডিগ্রী লাভ করে প্রতিবছর বহু
যুবক যুবতী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত
হন। ফলে তাদের মাধ্যমে সেই সব স্থানে উন্নত পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রসার
ঘটে। সেখান থেকে বহু ছাত্র বিদেশে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়। যা পরবর্তীকালে
বাংলার চিকিৎসা বিদ্যায় নব দিগন্তের উন্মোচন করে।
প্রশ্ন :- (৬) টীকা লিখ :- আই এ সি এস।
অথবা
বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য
কালটিভেশন অব সায়েন্স ( IACS ) এর অবদান লেখো।
উত্তর :- ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স - দেশীয় ঐক্যের
পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি - এই মহান উদ্দেশ্য
নিয়ে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুলাই ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার কলকাতায় এই
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
উদ্যোগ :- এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা উদ্ভিদবিদ্যা
প্রাণিবিদ্যা প্রভৃতি সমস্ত বিজ্ঞানের বিভাগ গুলির গবেষণা ও চর্চার উদ্যোগ নেওয়া
হয়। দেশ বিদেশ থেকে ছাত্ররা এখানে গবেষণা করতে আসতেন। মহেন্দ্রলাল সরকারের
সংস্পর্শে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সি ভি রমন এখানে বিজ্ঞান সাধনা শুরু করেন।
দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক এখানে গবেষণার কাজে ও বক্তৃতা
দেওয়ার কাজে নিজেদের নিয়োগ করেছিলেন।
পত্রিকা প্রকাশ :- নিজেদের বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণামূলক কাজগুলি প্রকাশের জন্য আই
এ সি এস "ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। এখানে
নিয়মিতভাবে নিত্যনতুন গবেষণামূলক পত্রগুলি প্রকাশিত হতো।
খ্যাতনামা বিজ্ঞানী :- জগদীশচন্দ্র বোস, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনি লাল বোস, সি
ভি রমন, মেঘনাথ সাহা প্রমুখ খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির গৌরব অনেকখানি বৃদ্ধি পায়।
মূল্যায়ন :- বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা ও চর্চার উদ্দেশ্যে
উনিশ শতকের ভারতে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
ছিল আই এ সি এস। এই প্রতিষ্ঠান উপনিবেশিক ভারতে বিজ্ঞান চর্চার যে পরিবেশ তৈরি
করে দিয়েছিল তা পরবর্তীকালে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছোয়। বিজ্ঞান
সাধনায় এ বিপুল অবদানের জন্য ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারকে জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার
জনক বলে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন :- (৭) টীকা লিখ :- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ।
উত্তর :- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিশ
শতকের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান চর্চার বিভাগকে অতিরিক্ত গুরুত্ব
দেওয়ার কথা আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গুরুত্বপূর্ণ
পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট আইনজীবী ও শিক্ষাদরদী স্যার তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষের
উদ্যোগে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্টজনের অবদান :- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর
পিছনে বহু বিশিষ্টজনের বিশেষ অবদান রয়েছে। তারকনাথ পালিত এবং রাসবিহারী ঘোষ
সাড়ে ৩৭ লক্ষ টাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দান করেন। মহারাজা
মনীন্দ্রচন্দ্র পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেন। রানী বাগেশ্বরী
ও গুরুপ্রসাদ সিংহ এই কলেজের জন্য অর্থ সাহায্য করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য স্যার আশুতোশ মুখোপাধ্যায় সর্বপ্রথম এরকম একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার আবেদন
জানিয়েছিলেন কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
পঠন পাঠন :- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা কালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই
কলেজকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ বলে ঘোষণা করেন। এখানে পদার্থবিদ্যা,
রসায়ন, ফলিত গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পঠন পাঠন হতে
থাকে। এই কলেজে পঠন-পাঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় সিভি
রমন মেঘনাদ সাহা সত্যেন্দ্রনাথ বসু পুলিনবিহারী সরকার প্রমুখ বিজ্ঞানীরা। এই কলেজ
মেধাবী ছাত্রদের আটটি বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিল।
উপসংহার :- ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার ইতিহাসে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের অবদান বিশেষভাবে
স্মরণীয়। পরবর্তীকালে ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার যে বিকাশ ঘটেছে এই কলেজ ছিল তারই
পথপ্রদর্শক।
প্রশ্ন :- (৮) টীকা লিখ :- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।
উত্তর :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে জাতীয় শিক্ষা ধারণার ভিত্তিতে ১৯০৬
খ্রিস্টাব্দের ১১ ই মার্চ গড়ে ওঠে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে
বিদেশি সরকারের প্রভাব মুক্ত করে পুরোপুরি জাতীয় আদর্শে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করা
হয়। "জাতীয় শিক্ষা"- কথাটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেছিলেন প্রসন্ন কুমার ঠাকুর।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য :- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রধান
উদ্দেশ্য গুলি ছিল -
১) ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষানীতির বিরোধিতা করা।
২) দেশের প্রয়োজনে স্বদেশী ধাঁচে বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৩) সাধারণ বিজ্ঞান ও কলা বিদ্যা এবং কারিগরি শিক্ষা এই দুই দিককে লক্ষ্য রেখে
শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৪) শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধক মনোভাব জাগিয়ে তোলা।
৫) বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা।
কার্যাবলী :- জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কার্যাবলীর বিভিন্ন দিক হলো ন্যাশনাল কলেজ
এবং স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। সাধারণ বিজ্ঞান ও কলা বিদ্যা শিক্ষার জন্য ১৯০৬
খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বউবাজারে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।
এছাড়া কলকাতা ঢাকা দিনাজপুর রংপুর ময়মনসিংহ প্রভৃতি স্থানে জাতীয় শিক্ষা
পরিষদের অধীনে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট :- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে জুলাই তারকনাথ পালিত
কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এই
প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে
গণশিক্ষার প্রসার ঘটায়।
ব্যর্থতা :- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ভারতে প্রথমবার জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে
সচেষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কারণ -
১) বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অর্থ সংকট দেখা দেয়।
২) বেতনের স্বল্পতার কারণে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান ত্যাগ।
৩) চাকরির বাজারে প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সার্টিফিকেটের গুরুত্বহীনতা প্রভৃতি।
প্রশ্ন :- (৯) টীকা লিখ :- বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।
অথবা
কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের ভূমিকা কি ছিল?
উত্তর :- উনিশ শতকে সরকারি উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সীমিত থাকলেও বিশ শতকে
কারিগরি শিক্ষা অনেক বেশি প্রসার লাভ করে। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্থাপনের পাশাপাশি
তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল টেকনিক্যাল
ইন্সটিটিউট।
উদ্দেশ্য :- বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার তথা বিজ্ঞান চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে
যাওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে এই প্রতিষ্ঠানটি একটি
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং সবশেষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
শিক্ষক বৃন্দ :- এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু এবং
সভাপতি রাসবিহারী ঘোষ ।এছাড়াও প্রমথ বসু, শরৎ দত্ত, যোগেশ ঘোষ প্রমুখও ছিলেন
এখানকার স্বনামধন্য শিক্ষক।
পাঠ্যক্রম :- এখানে দু ধরনের পাঠ্যক্রম ছিল - অন্তবর্তী ও মাধ্যমিক। পঠিত বিষয়
ছিল যন্ত্র বিজ্ঞান, বৈদ্যুতিন যন্ত্রবিজ্ঞান, ফলিত জ্যোতিষ, ভূবিদ্যা, গণিত,
ইংরেজি, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি।
সমন্বয় :- দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারে উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ একত্রে মিশে যায় এবং
"বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্কুল" নাম গ্রহণ করে। ১৯২৮
খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় "কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড
টেকনোলজি" ( CET )।
মূল্যায়ন :- বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান রূপে বেঙ্গল
টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। পরবর্তীকালে এই
প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হয়। যা আজকের যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলার বহু ছাত্র এখান থেকে শিক্ষা লাভ করে স্বনির্ভর ও
স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন।
প্রশ্ন :- (১০) শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতবাদ আলোচনা করো।
উত্তর :- ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তিত ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরকে বিশেষভাবে পীড়িত ও মর্মাহত করেছিল। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে ব্রিটিশ
শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জাতীয় ঐতিহ্য ও জীবনের কোন মেলবন্ধন নেই। তাই রবীন্দ্রনাথ
ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা করে বিকল্প শিক্ষা ভাবনায় ভাবিত হয়েছিলেন।
শিক্ষার উদ্দেশ্য :- রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল মানুষ তৈরি করা,
কেরানি তৈরি করা নয়। তিনি শিক্ষার মধ্য দিয়ে ছেলেদের মধ্যে মনন ও ভাবনাকে
জাগানোর কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, "মানুষকে বাদ দিয়ে শিক্ষা পরিপূর্ণতা লাভ করতে
পারে না"। তাই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানোই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
প্রকৃতির কোলে শিক্ষা :- রবীন্দ্রনাথ চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
কে "খোপওয়ালা বড়ো বাক্স" বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে শিক্ষা হবে প্রকৃতির কোলে
এবং মানুষের দুটি পরিবেশ - একটি সমাজ অপরটি প্রকৃতি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে
শান্তিনিকেতনের গাছপালা এবং প্রকৃতি ছাত্রদের শিক্ষার ভার নেবে।
শিক্ষার মাধ্যম :- শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব আরোপ
করেছেন। তিনি বলেছেন - "মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান।" তিনি মনে করতেন পাশ্চাত্য
শিক্ষার পাশাপাশি প্রাচ্য শিক্ষা ও মাতৃভাষাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রাচ্য
ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সুষ্ঠ মিলন হলেই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে।
তিন নীতি :- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নতুন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় তিনটি নীতি
প্রয়োগ করেন। এগুলি হল - (i) অবাধ স্বাধীনতা (ii) অবাধ চলাফেরা এবং (iii)
খেলাধুলা। একই সাথে তিনি কারিগরি শিক্ষার প্রতিও সমান গুরুত্ব আরোপ করেন।
উপসংহার :- উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নয়,
শিক্ষার সাথে আনন্দ কে মিশিয়ে দেওয়ায় রবীন্দ্র শিক্ষা নীতির মূল উদ্দেশ্য। এই
শিক্ষাব্যবস্থা যে দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী তা বলাই বাহুল্য। কারণ এই
পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর দেহ ও মনের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় এবং তারা পরম
তৃপ্তি ও আনন্দ সহকারে পাঠ গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন :- (১১) টীকা লিখ :- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার বিশ্বভারতী।
উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে যে প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল তা
ঔপনিবেশিক শিক্ষা নামে পরিচিত। ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন শিক্ষার পরিবেশকে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে
আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে। কারণ শিক্ষাঙ্গন যদি আকর্ষণীয় না হয় তাহলে সেটি
শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শান্তিনিকেতন ও ব্রহ্মচর্য আশ্রম:- মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার
ভুবন মোহন সিংহের কাছ থেকে কুড়ি বিঘা জমি কিনে বোলপুরে "শান্তিনিকেতন" নামে একটি
আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে সেই স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চারজন ছাত্র
নিয়ে "ব্রহ্মচর্য আশ্রম" বা "আশ্রম বিদ্যালয়" গড়ে তোলেন। এটি "ব্রম্ভ
বিদ্যালয়" নামেও পরিচিত। তিনি চেয়েছিলেন যে, শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সঙ্গে
একাত্ম হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করুক। একবার শান্তিনিকেতনে একজন শিক্ষক তাঁর কাছে
ছাত্রদের দুরন্তপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তিনি সেই শিক্ষককে জানান - "দেখুন
আপনার বয়সে তো কখনো তারা গাছে চড়বে না, এখন একটু চড়তে দিন। গাছ যখন ডালপালা
মিলেছে তখন সে মানুষকে ডাক দিচ্ছে। ওরা ওতে তো চড়ে থাকলেই বা।"
বিশ্বভারতী ভাবনা :- শান্তিনিকেতনের আশ্রম বিদ্যালয় তখন পরিপূর্ণ। দেশ-বিদেশের
ছাত্ররা সেখানে আসছে, পড়াশোনা করছে এবং এখান থেকেই কবিগুরুর মনে জাগে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানের ভাবনা। শিক্ষাবিদ চার্লস ফ্রিয়ার এন্ড্রুজ এর সঙ্গে
আলোচনা করে তিনি বিশ্বভারতী পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। এর পিছনে অ্যানিমেশন
প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাজের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাব ছিল।
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠান :- শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক বিদ্যালয় কে আরো বৃহত্তর রূপ
দিতে রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন। ১৯১৩
খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে যে নোবেল পুরস্কার পান সেই অর্থ দিয়েই তিনি এই
মহাবিদ্যালয় গড়ে তোলেন। নাম দেন "বিশ্বভারতী"।
উদ্দেশ্য :- বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ নিজেই ব্যাখ্যা
করেছেন। তাঁর মত বিশ্লেষণ করে তিনটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা করা যায় -
(১) ভারতীয় ঐতিহ্যের মিলন সেতু রচনা করা।
(২) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য কাজ বিদ্যার উৎপাদন এবং তার গৌণ কাজ বিদ্যাকে দান
করা।
(৩) প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এমন এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যা হবে
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনক্ষেত্র।
পরিশেষে উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার এক পরিণত রূপ হলো
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা, যা সমস্ত বিভেদের ঊর্ধ্বে। কবির কথায় "বিশ্বভারতী" এবং
"বিশ্ব মানবতাবাদ" একই অর্থবোধক।
প্রশ্ন :- (১২) বিদ্যাসাগরকে বিদ্যাবণিক বলা হয় কেন?
অথবা, বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:- ভূমিকা :- বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতের উন্নতিকল্পে ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগর ছিলেন এক সচেতন মুদ্রাকর, প্রকাশক ও পুস্তক ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের
ছাপাখানার যে ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তাতে বিদ্যাসাগরের নাম খুবই
উল্লেখযোগ্য।
বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা :
১) সংস্কৃত প্রেস :- বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে মদন মোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে
যৌথ উদ্যোগে "সংস্কৃত প্রেস" বা "সংস্কৃত যন্ত্র" নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা
করেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত প্রেসের একক মালিকে পরিণত হন। এই
প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা বই হল ভারতচন্দ্রের "অন্নদামঙ্গল"। এছাড়া
"বর্ণপরিচয়" - এর প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগ এই প্রেস থেকেই প্রকাশিত হয়।
২) ছাপা গ্রন্থ :- বিদ্যাসাগর মহাশয় - এর সব বই "সংস্কৃত যন্ত্র" থেকে ছাপা হয়।
এই প্রেস থেকে প্রকাশিত "শিশুশিক্ষা" ও "বর্ণপরিচয়" ছিল দুটি জনপ্রিয় বই।
৩) সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটারি প্রতিষ্ঠা :- বিদ্যাসাগর মুদ্রণ এবং প্রকাশনার সঙ্গে
সঙ্গে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলেজ স্ট্রীটে "সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটারি" প্রতিষ্ঠা
করেন বাংলা বইয়ের প্রকাশ ব্যবসার ক্ষেত্রে এই সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
নিয়েছিল।
৪) কলকাতা পুস্তকালয় প্রতিষ্ঠা :- পরবর্তী সময়ে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র
কলকাতা পুস্তকালয় নামে একটি নতুন বইয়ের দোকান খুলেন তার নিজের এবং কপিরাইটের
বইগুলি এই সংস্থা থেকে প্রকাশিত হতে থাকে তৎকালীন সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক প্রকাশনা ও
বিক্রয় সংস্থার মালিক হয়ে বাংলা বইয়ের ব্যবসার পথপ্রদর্শক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগর খ্যাতি লাভ করেন।
মূল্যায়ন :- বিদ্যাসাগর একাধারে বই লিখেছিলেন, ছাপিয়েছিলেন এবং তা বিক্রির জন্য
বইয়ের দোকানও খুলেছিলেন। এভাবে বাংলা বইয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসায়িক
ভিত্তি সুদৃঢ় করে গড়ে তুলেছিলেন বিদ্যাসাগর। তাই বিদ্যাসাগরকে " বিদ্যাবনিক "
বলা যথোপযুক্ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন