এই দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – WBCHSE Class 12 History Question and Answer, Suggestion, Notes – অতীতকে স্মরণ (প্রথম অধ্যায়) থেকে এই রচনাধর্মী (৮ নম্বরের ) প্রশ্নগুলো আগামী ( West Bengal Class 12th Twelve XII History Examination ) – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
১) স্মৃতি কথার সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
উত্তর :- স্মৃতি কথা : জনশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো স্মৃতিকথা। কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বা কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কোন ব্যক্তি তার অতীত স্মৃতি থেকে অতীত ঘটনার যে বিবরণ দেন, তাকে স্মৃতি কথা বলা হয়।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গবেষকরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে স্মৃতিকথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
i ) স্মৃতিচারণ : স্মৃতিকথা যে একজন লেখক তার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া বা তার প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।
ii ) দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য : স্মৃতি কথা হল লেখকের এক ধরনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ। যেখানে লেখক তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দেন।
iii ) সত্য বিবরণ : অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা ওই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো ব্যাক্তি এই ঘটনার বিবরণ দেন।
উদাহরণ : নারায়ণ সান্যালের "আমি নেতাজিকে দেখেছি", সংগীত শিল্পী মান্না দের "জীবনের জলসাঘরে" প্রভৃতি।
স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্য : স্মৃতিকথার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
i ) সত্য ঘটনার বিবরণ : অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত বা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তার স্মৃতি থেকে স্মৃতিকথার বিবরণ দেন। তাই স্মৃতি কথার কাহিনীগুলির মধ্যে সত্যতা থাকে।
ii ) বিশেষ ঘটনার বিবরণ : স্মৃতিকথাতে লেখক তার জীবনের বিশেষ বিশেষ কিছু ঘটনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
iii ) বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি : অধিকাংশ স্মৃতিকথার লেখক বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমকালীন ঘটনাগুলির বিবরণ দেন। এর ফলে কোন ঘটনার বিবরনে বিভিন্ন স্মৃতিকথার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকে।
iv ) পরিবর্তিত পরিস্থিতি উপস্থাপন : স্মৃতিকথা গুলোতে লেখক যে বিখ্যাত ঘটনাটির বিবরণ দেন তা সাময়িক পরিবেশের উপর কি প্রভাব ফেলেছিল বা ওই ঘটনার প্রভাবে সমসাময়িক পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল তা ফুটে ওঠে।
v) উত্তম পুরুষে লেখা : স্মৃতি কথাগুলি লেখক উপস্থাপন করেন উত্তম পুরুষে অর্থাৎ নিজের যবানিতে।
মূল্যায়ন : স্মৃতি কথাগুলি সত্য হিসেবে গ্রহণ করার আগে কিছু সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত। প্রথমত, নিজের মতাদর্শকে সমর্থন করতে গিয়ে অনেক সময় লেখক প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে দেখান। দ্বিতীয়ত, অল্প শিক্ষিত ব্যক্তিরা অনেক সময় স্মৃতিকথার মাধ্যমে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারেন না।
২) লোককথা কি? লোক কথার বৈশিষ্ট্য লিখ?
উত্তর :- লোককথা : ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে লোককথার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
টমলিন্স ও লিঞ্চ ব্রাউনের সংজ্ঞা : কার্ল টমলিন্স ও ক্যারাল লিঞ্চ ব্রাউনের মতে মানুষের জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণে যেসব গল্পকথা গড়ে উঠেছে তাকে লোককথা বলা হয়। এই গল্প কথাগুলি সুপ্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান যুগে বংশপরম্পরায় প্রচলিত আছে।
প্রচলিত সংজ্ঞা : জনশ্রুতি যে কাহিনীগুলি এক ধরনের গল্পকথা ও এক প্রকারের ঐতিহ্যবাহী লৌকিক সাহিত্য, যার সাহায্যে প্রাকৃতিক অথবা আধ্যাত্মিক কোন ঘটনার ব্যাখ্যা বা উপলব্ধির চেষ্টা করা হয় তাকে বলে লোককথা।
উদাহরণ : পন্ডিত বিষ্ণু শর্মার "পঞ্চতন্ত্র, নারায়ন পন্ডিতের "হিতোপদেশ", দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার এর "ঠাকুরমার ঝুলি" প্রভৃতি লোককথার উজ্জ্বল উদাহরণ।
লোককথার বৈশিষ্ট্য : লোককথার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
১) কাল্পনিক বিষয় : লোককথার চরিত্রগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তব নয়। মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন কাল্পনিক ও ভৌতিক চরিত্র যেমন দৈত্য - দানব, পরি, ডাইনি, পশুপাখি ইত্যাদিকে যুক্ত করে কাহিনী কে জনপ্রিয় করে তোলা হয়।
২) নির্দিষ্ট স্থান - কাল ও পাত্রের অভাব : লোককথার কাহিনীতে নির্দিষ্ট স্থান কাল পাত্রের উল্লেখ থাকে না। লোককথার গল্পগুলি শুরু হয় - "অনেকদিন আগেই এক দেশে এক রাজা থাকতো" এইভাবে।
৩) নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীকে মানুষে পরিণত করা : লোককথার কাহিনীগুলিতে পশুপাখি, কীট - পতঙ্গ, সাপ, কুমির প্রভৃতি নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীগুলি মধ্যে মানুষের মতো ব্যক্তিত্ব আরোপিত হতে দেখা যায়।
৪) মুখ্য চরিত্র মানুষ : লোককথার মুখ্য চরিত্রগুলি সাধারণভাবে মানুষ হয়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ সুখ-দুঃখের কাহিনীগুলি এখানে গুরুত্ব লাভ করে।
৫) ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্বহীন : ধর্মীয় বা ঐশ্বরিক ঘটনা গুলির উপর লোক কথার কাহিনীগুলি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে না।
৬) শিশুদের মনোরঞ্জন করা : লোক কথার কাহিনীগুলিতে কেবলমাত্র শিশু ও কিশোরদের মনোরঞ্জনের রসদ থাকে। বয়স্ক মানুষদের লোককথার প্রতি কোন বিশেষ আগ্রহ থাকে না।
৭) অলিখিত কাহিনী : লোক কথার কাহিনীগুলি প্রথম অবস্থায় লিখিত ছিল না, মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। তাই লোককথা হলো মৌখিক ঐতিহ্য ভিত্তিক সাহিত্য বা শ্রুতি সাহিত্য।
৮) নৈতিক শিক্ষার বার্তা : লোককথার কাহিনীগুলির কেন্দ্রে থাকে নৈতিক শিক্ষার বার্তা। এতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নেয় অসত্যের বিরুদ্ধে সত্য কিংবা কাপুরুষতার পরিবর্তে পৌরুষত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
৩) কিংবদন্তি বা লেজেন্ড এর সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। কয়েকটি কিংবদন্তির উদাহরণ দাও।
উত্তর :- কিংবদন্তি : মৌখিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কিংবদন্তি হলো সত্য, মিথ্যা ও সম্ভাবনা - এই তিনের সমষ্টি। সাধারণত বিশেষ কোনো অঞ্চলে সংগঠিত বিশেষ কোনো ঘটনা বা চরিত্র কেন্দ্রিক কাহিনী যা মানুষ প্রজন্মের প্রজন্ম মনে রাখে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রচার করে, তাই হলো কিংবদন্তি বা লেজেন্ড।
কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য : প্রাচীন কিংবদন্তি বা লেজেন্ডের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো -
বিস্ময় ও কল্পনা : কিংবদন্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বিস্ময় ও কল্পনার আধিক্য। প্রাথমিক অবস্থাতে কিংবদন্তিতে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্র নিহিত থাকে, কিন্তু ঘটনা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনা ও বিষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
অতিরঞ্জন : কিংবদন্তির অপর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, অতিরঞ্জন করার প্রবণতা। কিংবদন্তিতে ভিত্তিহীন নানা ঘটনার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
কেন্দ্রীয় চরিত্র নির্ভরতা : প্রতিটি কিংবদন্তি তে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে এবং এই চরিত্রটি একসময় জীবিত ছিল। কিংবদন্তির কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলি সাধারণত সাধারণ মানুষের থেকে বেশি ক্ষমতাবান, সাহসী ও মানবদরদী ছিলেন।
ইতিহাসধর্মিতা : অনেক সময় কিংবদন্তির মধ্যে সত্য ইতিহাস ভিত্তিক কাহিনী লুকিয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক নৃ বিজ্ঞানীগণ মনে করেন কিংবদন্তির মধ্যে অল্প হলেও ইতিহাসের সূত্র রয়েছে।
বিষয়বস্তু : কিংবদন্তির বিষয়বস্তু নানা ধরনের হতে পারে। যেমন - আধ্যাত্মিক ঘটনা, পরীদের কাহিনী, ভূত-প্রেতের কাহিনী, প্রেম কাহিনী এমনকি কোন ঐতিহাসিক ঘটনা বা চরিত্র কিংবদন্তির বিষয়বস্তু হতে পারে।
কিংবদন্তির উদাহরণ : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য কিংবদন্তির কাহিনী প্রচলিত আছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কিংবদন্তির উদাহরণ হল -
A ) হারকিউলিস : প্রাচীন গ্রিসের কিংবদন্তি চরিত্র গুলির মধ্যে অন্যতম হলেন হারকিউলিস। তিনি ছিলেন উত্তর আফ্রিকার সুদক্ষ যোদ্ধা ও রণ নিপুন সেনাপতি। গ্রিক কিংবদন্তি অনুসারে হারকিউলিস হলেন দেবতাদের রাজা জিউসের পুত্র। যৌবনে হারকিউলিসের বহু বীরত্বের কাহিনী প্রচলিত আছে।
B ) প্রমিথিউস : প্রাচীন গ্রিসের অপর একটি অন্যতম কিংবদন্তি হল প্রমিথিউস। প্রমিথিউস প্রথম মানুষকে সোজা হয়ে হাঁটতে শেখান। অন্যান্য জীব অপেক্ষা তিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠ ও মহৎতর বলে ঘোষণা করেন। তিনি সূর্যের কাছে গিয়ে আগুন নিয়ে এসে মানুষকে উপহার দেন।
C ) শ্রীকৃষ্ণ : প্রাচীন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় কিংবদন্তি চরিত্র হল শ্রীকৃষ্ণ। মহাকবি ব্যাসদেবের মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ চরিত্রের উল্লেখ আছে। অত্যাচারী রাজা কংসকে হত্যা করে তিনি মথুরাবাসীকে রক্ষা করেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের সারথী হয়ে শ্রীকৃষ্ণ গীতার শ্লোক শোনান।
D ) শ্রী রামচন্দ্র : প্রাচীন ভারতের অপর একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি চরিত্র হলো শ্রী রামচন্দ্র। মহাকবি বাল্মিকী মুনি রচিত রামায়ণ মহাকাব্যে শ্রী রামচন্দ্রের চরিত্রটির উল্লেখ আছে। তিনি লঙ্কেশ্বর রাবণ ও আরো অনেক রাক্ষস কে হত্যা করেন।
৪) স্মৃতিকথার গুরুত্ব আলোচনা করো । স্মৃতিকথার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে লিখো।
উত্তর:- স্মৃতিকথার গুরুত্ব : স্মৃতিকথা হল ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌখিক উপাদান। ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার বিবরণ গুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে -
A ) সত্যতা :- স্মৃতিকথার লেখক কোন ঘটনা বা কাহিনীর প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘটনা বা কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে তার স্মৃতি রোমন্থন করে ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করেন। তাই স্মৃতিকথা কোন কাল্পনিক কাহিনী নয়, এতে ঘটনার বাস্তব সত্যতা থাকে।
B ) বিখ্যাত ব্যক্তির বিবরণ :- স্মৃতিকথা গুলি অধিকাংশে রচনা করেন সমাজের বিখ্যাত ও সু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। লেখক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, বিপ্লবী আন্দোলনের নেতারা স্মৃতিকথা রচনা করেছেন। এই কারণে স্মৃতিকথায় অবান্তর বা অতিরঞ্জিত কথা কম থাকে।
C ) বাস্তব বিবরণ :- বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যাক্তি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে স্মৃতিকথা রচনা করেন। তাই স্মৃতিকথায় বাস্তব ঘটনার তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায়।
D ) স্বৈরাচারীর বিবরণ :- স্বৈরাচারী শাসককুল যখন কোন সত্য ঘটনাকে সংবাদপত্র বা অন্যান্য পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে দেয় না, গণমাধ্যম গুলির কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে তখন স্মৃতিকথা ইতিহাসের একমাত্র উপাদান হিসেবে তা প্রকাশ করে।
স্মৃতিকথার ত্রুটি :- স্মৃতিকথার বেশ কিছু ত্রুটি আছে। এর ফলে অনেক সময় স্মৃতিকথা থেকে সঠিক ঐতিহাসিক উপাদান পাওয়া যায় না। যেমন -
A ) মতাদর্শ গত সংকীর্ণতা :- অনেক সময় লেখক নিজের মতাদর্শকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজের স্মৃতি কথাই অতীতের প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরেন।
B ) ভিন্নতা :- কোন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা পরবর্তীকালে বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিকথায় বিভিন্নভাবে ফুটে ওঠে। এর ফলে সঠিক ঘটনাটি জানা জটিল হয়ে পড়ে।
C ) স্মৃতি ভ্রম :- স্মৃতি কথা মূলক গ্রন্থ গুলিতে অনেক সময় লেখকের স্মৃতি বিভ্রম ঘটতে পারে। এর ফলে ঘটনাটির সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায় না।
D ) অশিক্ষিত এবং স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তিদের রচনা :- অনেক সময় অশিক্ষিত এবং স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের স্মৃতিকথায় ঘটনাটির প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারেন না। এর ফলে ঘটনাটির তাৎপর্য বোঝা যায় না।
মূল্যায়ন :- ত্রুটি সত্ত্বেও স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাস রচনার উল্লেখযোগ্য উপাদান। কারণ বিখ্যাত ব্যক্তিরা বাস্তব ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরেন, ফলে প্রকৃত ইতিহাস জানা সহজ হয়।
৫) জাদুঘর কাকে বলে? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
অথবা
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- জাদুঘর শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো "Museum", এই Museum শব্দটি গ্রিক শব্দ "Mouseion" থেকে এসেছে এর অর্থ হল - গ্রিক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউজদের মন্দির। এই মন্দির গুলিতে প্রাচীন গ্রিসের পাঠাগার ও বিভিন্ন শিল্পকলার সংগ্রহশালা গড়ে ওঠে। তাই ব্যুৎপত্তিগত অর্থে জাদুঘর হল বিভিন্ন শিল্পকলার সংগ্রহশালা।
জাদুঘরের সংজ্ঞা :
A ) পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমির মতে - যে ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে তাই হল জাদুঘর।
B ) IOCM ( International Council of Museums ) জাদুঘরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন - জাদুঘর হল এমন একটি অলাভজনক জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত সমাজসেবা মূলক স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষা লাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দ লাভের জন্য মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলিকে নিয়ে গবেষণা করে।
C ) সাধারণ অর্থে - জাদুঘর হলো এমন একটি সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও শিল্পকলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন গুলি সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে জনসাধারণের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী :: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাদুঘর গুলির সাধারণ উদ্দেশ্য বা কার্যাবলীর মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
জাদুঘরের এরকম কয়েকটি সাধারণ উদ্দেশ্য হলো -
A ) ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহ : জাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য ও কাজ হল - দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা অতি মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলি খুঁজে বের করা ও সংগ্রহ করা।
B ) ঐতিহাসিক নিদর্শনের প্রদর্শন : জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলি ডিসপ্লে কেসে ( Display Case ) সাজানো থাকে, যার ফলে জনসাধারণ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে দর্শনের সুযোগ পায়।
C ) গবেষণার কাজ : জাদুঘরে যে সমস্ত ঐতিহাসিক বস্তু সংরক্ষিত থাকে তার প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করা জাদুঘরের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য বা কাজ।
D ) Model তৈরি : জাদুঘরের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মডেল তৈরি করে তা জনগণকে প্রদর্শন করা।
E ) প্রকাশনা করা :
F ) জন সচেতনতা ও জ্ঞানের প্রচার : জাদুঘরের সংরক্ষিত প্রত্ন নিদর্শন গুলি দর্শকের মনে এক সচেতনতা জাগায়। প্রত্ন নিদর্শনগুলি দর্শনের ফলে দর্শকের জ্ঞানের ও প্রসার ঘটে।
G ) দর্শকদের আনন্দদান : জাদুঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল - সাধারণ দর্শকদের আনন্দদান করা। গবেষকদের পরিবর্তে সাধারণ মানুষ জাদুঘরে বেশি সংখ্যায় আসে। তাই তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য জাদুঘর নানা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে।
H ) ইতিহাস - চেতনা : জাদুঘর ইতিহাস - বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগের দ্বারা জনগণের মধ্যে ইতিহাস - চেতনা বৃদ্ধি করে।
মূল্যায়ন : জাদুঘর অতীতের টুকরো টুকরো বিষয়গুলিকে এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে যার ফলে অতীতের কিছু ছবি আমাদের মনে ভেসে ওঠে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন