স্নেহের দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা, Rajesh Sir Tutorial পেজে তোমাদের স্বাগত। আমরা তোমাদের সফলতায়, তোমাদের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে তোমাদের পাশে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আজ এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির "ইতিহাস" বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় "সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা" অংশটির থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান"। এই প্রশ্নের উত্তরটি তোমরা যদি এইভাবে লিখতে পারো তাহলে যত পূর্ণমান থাকবে পরীক্ষক তোমাদেরকে ঠিক তত নম্বরই দেবে, পরীক্ষকের নম্বর কাটার কোনো সুযোগ থাকবে না। এই প্রশ্নটি দশম শ্রেণির প্রথম সামেটিভ পরীক্ষায়, টেস্ট পরীক্ষায় এবং মাধ্যমিকের ফাইনাল পরীক্ষায় বহুবার এসেছে বা ভবিষ্যতে আসবে। তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য তোমরা অবশ্যই এই প্রশ্নোত্তরটি খুব ভালোভাবে অনুশীলন করবে। দশম শ্রেণির প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নোত্তর পেতে তোমরা www.rajeshsir.in - এ খোঁজ করবে।
এছাড়া আমাদের YouTube Channel RAJESH SIR TUTORIAL এ তোমরা দশম শ্রেণির প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ নোটস, সাজেশন এবং আলোচনা পাবে।
A important notes for WBBSE Class 10, History Second Chapter " Sanskar : Baishistho o Parjalochona" Raja Rammohan Roy.
বোর্ড :- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
শ্রেণি :- দশম শ্রেণি
বিষয় :- ইতিহাস
অধ্যায় :- দ্বিতীয় অধ্যায়
অধ্যায়ের নাম :- সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা।
আলোচ্য অংশ :- পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান।
১) পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর :- "ভারত পথিক" রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত। তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে এক উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নবভারত গড়ে উঠবে।
-: পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন :-
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রামমোহন পাশ্চাত্য দর্শন, গণিত, রসায়ন, আইন, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শিক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচার চালান। তিনি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা :- পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর পরবর্তী নাম হয় Indian Academy.
সরকারকে পত্র :- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে রামমোহন লর্ড আমহার্স্ট দেওয়া একপত্রে দাবি জানান, যেন এই অর্থ আধুনিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষার জন্য খরচ করা হয়।
বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা :- শিক্ষার্থীদের মন থেকে কুসংস্কার ও মূর্তিপূজা দূর করে সমাজ বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
অন্যান্যদের সহায়তা :- বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের কাজে তিনি ডেভিড হেয়ার, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখকে নানাভাবে সাহায্য করেন।
-: সমাজ সংস্কারে রামমোহন :-
ভারতীয় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে "ভারত পথিক" রাজা রামমোহন রায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। তার উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কার দূর করে আধুনিক সমাজ গড়ে তোলা।
আত্মীয় সভা ও ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা :- হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামী ও পৌত্তলিকা বাদের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা এবং ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয় যা সমাজ সংস্কার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ :- স্বামীর মৃত্যু হলে জ্যান্ত স্ত্রীকে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে দেওয়া হতো। হিন্দু ধর্মের এই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রামমোহন জনমত গড়ে তোলেন এবং লর্ড বেন্টিং এর সহায়তায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন :- রামমোহন বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন প্রাচীন শাস্ত্রে পুরুষদের বহুবিবাহের অধিকার দেওয়া হয়নি।
জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা :- তিনি জাতিভেদ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্তি দূর করার জন্য তিনি মৃত্যুঞ্জয়াচার্যের লেখা "বজ্রসূচী" গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করে প্রচার করেন।
নারী মুক্তি আন্দোলন :- তৎকালীন সময়ে নারীদের কোন স্বাধীনতা ছিল না। বাল্যবিধবাদের নানান অত্যাচার সহ্য করতে হতো। তিনি নারীদের উন্নতির জন্য বাল্যবিবাহ, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
অন্যান্য সংস্কার :- ব্রিটিশ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য আইন প্রণয়নের চেষ্টা করলে রামমোহন তার বিরোধিতা করেন। বহুবিবাহ রদ, জমিদারি প্রথা বিলোপ, কৌলিন্য প্রথার বিরোধিতা এবং সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকা প্রকাশে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
মূল্যায়ন :- ইতিহাসে রামমোহন এক জীবন্ত সেতু যার উপর দিয়ে ভর করে ভারত তার বিশাল অতীত থেকে অসীম ও আধুনিক ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হয়েছে। শিক্ষা, সমাজনীতি রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তিবাদী ও আধুনিক চিন্তাধারার জন্য রামমোহনকে "ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ" বলা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন