শ্রেণি :- সপ্তম শ্রেণি
বিষয় :- ইতিহাস
অধ্যায় :- অষ্টম অধ্যায়
মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, আজ আমরা এই অংশে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অষ্টম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট অংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর গুলি সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এই প্রশ্ন - উত্তর গুলি তোমরা অনুশীলন করলে আগামী পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করতে পারবে।
এই অধ্যায়টি বার্ষিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ছোট এবং বড় মিলিয়ে একাধিক প্রশ্ন আসবে। তাই তোমরা ভালো ফলাফলের জন্য এই প্রশ্নোত্তর গুলি অবশ্যই মুখস্থ করবে।
Some Important questions and the answer for the students of class 7 of West Bengal board of secondary education WBBSE. Chapter number 8th, Mughal samrajyer sangkot.
প্রতিটি প্রশ্নের মান ১
১) কোন সম্রাটের আমলে মুঘল সাম্রাজ্য অনেক বড় হয়ে উঠেছিল?
উত্তর :- ঔরঙ্গজেবের আমলে।
২) শিবাজীর বাবার নাম কি?
উত্তর :- শাহজি ভোঁসলে।
৩) বিজাপুরের সুলতান শিবাজী কে দমন করার জন্য কাকে পাঠিয়েছিলেন?
উত্তর :- আফজল খানকে।
৪) শিবাজীর আটজন মন্ত্রী বা অষ্টপ্রধানের মধ্যে প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর :- পেশোয়া।
৫) মারাঠারা নিজেদের রাজ্যকে কি বলতো?
উত্তর :- স্বরাজ্য।
৬) সাদাত খাঁর মৃত্যুর পর জাঠ বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দেন?
উত্তর :- সফদরজঙ্গ।
৭) ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর জাঠ বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দেন?
উত্তর :- চুড়ামণ।
৮) শিখদের চতুর্থ গুরু কে ছিলেন?
উত্তর :- রামদাস।
৯) শিখদের পঞ্চম গুরু কে ছিলেন?
উত্তর :- গুরু রামদাসের ছেলে অর্জুন দেব।
১০) কোন শিখ গুরু একসঙ্গে দুটি তলোয়ার রাখতেন? কেন?
উত্তর :- শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ একসঙ্গে দুটি তরোয়াল রেখে বোঝাতে চাইতেন তাঁর ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উভয় ক্ষমতায় রয়েছে।
১১) শিখদের নবম গুরু কে ছিলেন?
উত্তর :- তেগ বাহাদুর।
১২) ঔরঙ্গজেব কোন শিখ গুরু কে হত্যা করেন?
উত্তর :- তেগ বাহাদুর।
১৩) শিখদের দশম গুরুর নাম কি?
উত্তর :- গুরু গোবিন্দ সিংহ।
১৪) কোন শিখ গুরু খালসা সংগঠন তৈরি করেন?
উত্তর :- গুরু গোবিন্দ সিংহ ১৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে খালসা সংগঠন তৈরি করেন।
১৫) শিখদের মধ্যে কারা সিংহ পদবী ব্যবহার করতে শুরু করে?
উত্তর :- খালসা পন্থী শিখরা।
১৬) শিবাজীর মায়ের নাম কি ছিল?
উত্তর :- জিজাবাঈ।
১৭) কে শিবাজী কে পুরন্দরের সন্ধি করতে বাধ্য করেন?
উত্তর :- জয় সিংহ।
১৮) শিবাজী কোথায় অভিষেক ঘটে?
উত্তর :- রায়গড় দুর্গে ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে।
১৯) মহারাষ্ট্রের প্রথম পেশোয়া কে ছিলেন?
উত্তর :- পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথ।
২০) জাঠ বিদ্রোহের সূচনাকে করেন?
উত্তর :- গোকলা।
২১) শিবাজী কিসের সাহায্যে আফজল খানকে হত্যা করেন?
উত্তর :- বাঘনখ।
২২) শিবাজী শিক্ষকের নাম কি ছিল?
উত্তর :- দাদাজি কোন্ডদেব।
নিচের নাম গুলির মধ্যে কোনটি বাকিগুলির সঙ্গে মিলছে না তা লিখ। ( অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর )
২৩) পুনে, কোঙ্কন, আগ্রা, বিজাপুর
উত্তর :- আগ্রা।
২৪) বান্দা বাহাদুর, আফজল খান, শায়েস্তা খান, মুয়াজ্জম।
উত্তর :- বান্দা বাহাদুর।
২৫) অষ্টপ্রধান, বর্গি, মাবলে, খালসা
উত্তর :- খালসা।
২৬) রামদাস, তেগবাহাদুর, জয়সিংহ, হরগোবিন্দ।
উত্তর :- জয় সিংহ।
২৭) কেশ, কৃপাণ, কলম, কঙ্খা
উত্তর :- কলম।
২৮) শিবাজীর গুরুর নাম কি?
উত্তর :- রামদার স্বামী।
২৯) শিবাজীর পতাকার নাম কি?
উত্তর :- ভাগোয়া ঝান্ডা।
৩০) ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর দিল্লির শাসক কে হন?
উত্তর :- ঔরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র মুয়াজ্জম।
প্রতিটি প্রশ্নের মান ২ বা ৩
১) খালসা কি?
উত্তর :- "খালসা" শব্দের অর্থ হলো পবিত্র। যে সমস্ত শিখ সামরিক বৃত্তি নিয়ে নিজ ধর্ম রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেন, তারাই খালসা নামে পরিচিত হন। সেই থেকেই শিখ সামরিক সংগঠনের নাম হয় খালসা।
২) মাবলে ও পেশওয়া কাদের বলা হত?
উত্তর :- শিবাজী পুনে আক্রমণের সময় মাওয়াল অঞ্চল থেকে এক দল পদাতিক সৈন্য সংগ্রহ ও নিয়োগ করেন। এদের বলা হতো মাবলে বা মাওয়ালি।
শিবাজীর মৃত্যুর চল্লিশ বছর পরে পেশোয়াদের হাতেই শাসন ক্ষমতা চলে আসে। শিবাজীর মৃত্যুর ৫০ বছর পরে পেশোয়া প্রথম বাজিরাও হিন্দু রাজাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি হিন্দু সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন।
৩) কবে কাদের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি হয়েছিল? এই সন্ধির ফলাফল কি হয়েছিল?
উত্তর :- জয় সিংহ এবং মারাঠা নেতা শিবাজীর মধ্যে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
ফলাফল :- এই সন্ধির চুক্তি অনুযায়ী শিবাজী মোঘলদের ২৩ টি দুর্গ ছেড়ে দেয়। শিবাজী কে অপমান এবং বন্দী করা হয়। এই সন্ধির দ্বারা জয়সিংহ বিজাপুর ও শিবাজীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেন।
৪) জাঠদের সঙ্গে মোগলদের সংঘাত কেন বেঁধেছিল?
উত্তর :- জাঠরা দিল্লি, আগ্রা, মথুরা অঞ্চলে বসবাস করত। জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের আমলে রাজস্ব সংগ্রহ নিয়ে তাদের সঙ্গে মোগলদের সংঘাত বাঁধে। এছাড়াও জাঠরা চেয়েছিল নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাজ্য গঠন করতে, যা মুঘল শাসকরা মেনে নিতে পারেনি।
৫) ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে কি কি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল?
উত্তর :-অর্থনৈতিক পরিবর্তন :- ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য বিশালাকার ধারণ করার জন্য প্রশাসনিক খরচও অনেক বেড়ে গিয়েছিল। মনসব পদ লাভকে কেন্দ্র করে অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এছাড়া এই সময়ে জাঠ এবং সৎনামী বিদ্রোহ কৃষি ব্যবস্থার সংকটকে তীব্র করে তোলে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন :- এই সময় মুঘল শক্তির দুর্বলতার সুযোগে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মারাঠাদের উত্থান ঘটে। এই সময় শিব শক্তির সঙ্গে মুঘলদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল।
৬) বিজাপুর ও গোলকুন্ডা জয়ের ফলে মোগলদের কি সুবিধা হয়?
উত্তর :- বিজাপুর ও গোলকুন্ডা রাজ্য দখলের পর দাক্ষিণাত্যের সুবিশাল অঞ্চল মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। অধিকার করা অঞ্চলের সবথেকে ভালো জমিগুলি ঔরঙ্গজেব খাস জমি হিসেবে রেখে দেন। এই সমস্ত খাসজমির রাজস্ব সরাসরি কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হতো।
৭) শিবাজীর সঙ্গে মোগলদের দ্বন্দ্বের কারণ কি ছিল?
উত্তর :- শিবাজী ও মোগলদের দ্বন্দ্বের কারণ গুলি হল -
i ) শিবাজী একে একে মোগল এলাকাগুলি আক্রমণ করেন এবং সেগুলিতে মারাঠাদের প্রাধান্য গড়ে তোলেন।
ii ) শিবাজী মারাঠাদের জন্য নিজেদের রাজ্য গড়ে তোলেন। এছাড়াও আশেপাশের মোগল এলাকাগুলিতে তিনি কর আদায় করতে শুরু করেন।
iii ) মারাঠা আধিপত্যের বিস্তার ঔরঙ্গজেবের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে শিবাজীর সঙ্গে মোগলদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
iv ) শিবাজী দুবার বন্দরনগরী সুরাট আক্রমণ করে লুঠপাট করেন।
প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫
১) মুঘল যুগের শেষ দিকে কৃষি সংকট কেন বেড়ে গিয়েছিল? এই কৃষি সংকটের ফল কি হয়েছিল?
উত্তর :- মুঘল যুগের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি। মুঘল যুগের শেষ দিকে বিভিন্ন কারণে কৃষি সংকট বেড়ে গিয়েছিল। এই কারণগুলি হল -
কৃষি নির্ভর জনসংখ্যা বৃদ্ধি :- মুঘল যুগের শেষের দিকে ফসলের উৎপাদন বাড়লেও তার তুলনায় কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
মুঘল নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা :- দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের সময় রাজস্ব আদায়ের জন্য মুঘল মনসবদাররা মারাঠা সর্দারদের সাহায্য নিত। তার ফলে ওইসব অঞ্চলে মুঘলদের নিয়ন্ত্রণ অনেক শিথিল হয়ে গিয়েছিল।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি :- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অভিজাতরা জমি থেকে তাদের আয় বাড়াতে চেয়েছিল। তারা জমিদার ও কৃষকদের বেশি রাজস্ব দেওয়ার জন্য চাপ বাড়িয়েছিল।
কৃষক বিদ্রোহ :- এই সময় কৃষকরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও রাজস্বের চাপে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অনেক সময় জমিদাররাও কৃষকদের মদত দিত।
©© কৃষি সংকটের ফল :- মুঘল যুগের শেষ থেকে কৃষি সংকটের ফলে -
i ) কৃষকরা বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহ করতে শুরু করে আবার কোন কোন অঞ্চলের কৃষকরা রাজস্ব দিতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ii ) এর ফলে জায়গিরদারি ও মনসবদারি সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। যা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ।
২) মোগলদের বিরুদ্ধে শিখরা কিভাবে নিজেদের সংগঠিত করেছিল, তা আলোচনা করো।
উত্তর :- সিখরা এক স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তির মত নিজেদের উত্থান ঘটালে মুঘলদের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে।
মোগলবিরোধী শিখদের সংগঠন
তেগবাহাদুরের নেতৃত্বে :- শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুর ঔরঙ্গজেবের অনুদার ধর্মনীতির বিরোধিতা করেন। তিনি চেয়েছিলেন মোগল অধীনতা থেকে বেরিয়ে শিখরা এক স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।
গুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্ব :- গুরু গোবিন্দ সিংহ খালসা প্রতিষ্ঠা করে শিখ জাতিকে সামরিক মন্ত্রে দীক্ষা দেন। তিনি গুরু প্রথা তুলে দেন এবং শিখ জাতিকে পাঁচটি "ক" ধারনের নির্দেশ দেন।
বান্দা বাহাদুরের নেতৃত্ব :- গুরু গোবিন্দ সিংহের অনুচর বান্দা বাহাদুর শিখদের সংগঠিত করেন ও মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। তিনি যমুনা থেকে শতদ্রু পর্যন্ত অঞ্চলে শিখ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন।
৩) মোগল যুগের শেষ দিকে জায়গিরদারি ও মনসবদারি ব্যবস্থায় কেন সংকট তৈরি হয়? মোগল সাম্রাজ্যের উপর এই সংকটের কিরূপ প্রভাব পড়েছিল বলে তুমি মনে কর?
উত্তর :- মোগল আমলের শেষের দিকে জায়গিরদারি ব্যবস্থা তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়।
মূল কারণ :- মোগল যুগে মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গির দান করা হতো। ঔরঙ্গজেবের আমলে মনসবদারের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে জমির পরিমাণ বাড়েনি।
অন্যান্য কারণ :- জায়গিরদারি সংকটের অন্যান্য কারণগুলি হলো -
i ) মোগল রাজত্বের শেষের দিকে জায়গির লাভের জন্য মনসবদারদের মধ্যে চরম দলাদলি শুরু হয়।
ii ) জায়গীরদারদের ঘনঘন বদলি করার কারণে জায়গিরদারগণ স্থায়িত্বের অভাব অনুভব করে ও জায়গির পরিচালনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
জায়গিরদারি সংকটের প্রভাব :-
i ) জায়গির লাভকে কেন্দ্র করে মনসবদারদের মধ্যে দলাদলি চরমে পৌঁছায়। তাদের এই রেষারেষি সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
ii ) অধিক মুনাফার আশায় কৃষকদের উপর অত্যাচার করা হতো। এর ফলে বহু কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে চলে গেলে উৎপাদন কমে যায়।
iii ) জায়গিরদারি সংকটের ফলে সেনাবাহিনী শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন