স্নেহের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা, "Rajesh Sir Tutorial" এ তোমাদের স্বাগত জানাই। আশা করি তোমাদের পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছে। আজ এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায় "মুঘল সাম্রাজ্য" অংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি সম্পর্কে। এই অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন - উত্তরগুলি তোমাদের আগামী পরীক্ষায় MCQ, SAQ এবং শূন্যস্থান পূরণ বা সত্য মিথ্যা নির্ণয় বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে। এছাড়া যে অনুশীলনী প্রশ্নোত্তর গুলি দেওয়া হল সেগুলি আগামী পরীক্ষায় তোমাদের অবশ্যই আসবে। তাই তোমাদের আগামী পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে এই প্রশ্নোত্তর গুলি অতি অবশ্যই করে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলের দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষায় এই প্রশ্নোত্তরগুলি আসে। এ বিষয়ে আরেকটি কথা তোমাদের জানিয়ে রাখি, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর এবং পরীক্ষার আগে সাজেশন তোমরা এই Rajesh Sir Tutorial পেজ থেকে পেয়ে যাবে। শ্রেণি :- সপ্তম শ্রেণি বিষয় :- ইতি...
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
(Madhyamik History Question and Answer))
বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ( সপ্তম অধ্যায় ) | Madhyamik History Question and Answer ( 5th Chapter )
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর : বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ( সপ্তম অধ্যায় ) Madhyamik History Question and Answer : মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ( সপ্তম অধ্যায়) :- অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যামূলক উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর ও বিশ্লেষণমূলক উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | Madhyamik History 7th Chapter Question and Answer নিচে দেওয়া হলো।
এই দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – WBBSE Class 10 History Question and Answer, Suggestion, Notes – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (সপ্তম অধ্যায়) থেকে এই ৮ নম্বরের এবং ৪ নম্বরের প্রশ্নগুলো আগামী ( West Bengal Class 10th ( X )History Examination ) – পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য Rajesh Sir Tutorial এর এই প্রশ্নোত্তর গুলি অতি অবশ্যই অনুশীলন করবে। এই প্রশ্নোত্তর গুলি একান্তভাবে মৌলিক এবং স্বতন্ত্র। কোন রেফারেন্স বইয়ের লেখা থেকে এই নোটসগুলো লিখলে পরীক্ষক কোন অনেক বেশি নম্বর দেবেন, এই আশা রাখি।
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
( Madhyamik History Question and Answer))
বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ( সপ্তম অধ্যায় ) | Madhyamik History Question and Answer ( 7th Chapter ).
সপ্তম অধ্যায়
১) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- বিশ শতকের ভারতের ইতিহাসে নারী আন্দোলন এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ করলে বাংলা তথা ভারতে সংঘটিত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক সংখ্যক নারী অংশগ্রহণ করে।
আন্দোলনের ধরন :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল মূলত ঘরোয়া বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল প্রধানত -
১) স্বদেশীদ্রব্যের ব্যবহার করা
২) বিদেশী জিনিস ও কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে ফেলা
৩) অরন্ধন দিবস পালন করা
৪) বিপ্লবীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা।
নারীদের ভূমিকা :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় নারীরা মূলত সহযোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকরের দিন শোক দিবস পালনের জন্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী অরন্ধন উৎসবের আহ্বান জানান। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মা বোনেরা ঘরে ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন এবং রান্নাঘরে বিদেশী লবণ নিষিদ্ধ করেন।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সর্বপ্রথম বাংলা নারীরা শোভাযাত্রায় যোগদান করেন এবং বিদেশি দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং করে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে লিপ্ত থাকেন। স্বদেশী পণ্যের প্রচারে সরলা দেবী চৌধুরানী "লক্ষ্মীর ভান্ডার" গড়ে তোলেন।
নেতৃত্ব :- সরলা দেবী চৌধুরানী, হেমাঙ্গিনী দাস, দুকড়ি বালা দেবী, কুমুদিনী বসু, নির্মলা সরকার সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং শহর - গ্রামের নারীদের আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানান।
মূল্যায়ন :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রে অচিরেই যে চরমপন্থী আন্দোলন শুরু হয় তাতে নারী জাতির অনেকেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
২) অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :-
ভূমিকা :- কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজ বিভিন্ন ধারায় যুক্ত হয়ে পড়ে। গান্ধীজীর উত্থানের পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
নারীদের ভূমিকা :- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর গান্ধীজীর আহ্বানে জাতি - ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত স্তরের অসংখ্য নারী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। নারীরা চরকায় সুতো কেটে, বিদেশি কাপড় ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিং করার মহান দায়িত্ব পালন করেন।
নারীদের কর্মসূচি :- অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল সীমিত। নারীদের শুধুমাত্র স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ ও বিদেশী দ্রব্য বর্জনের কথা বলা হয়।
নারীদের কার্যকলাপ :- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১৭ নভেম্বর "প্রিন্স অফ ওয়েলস" ভারত ভ্রমণে এলে বোম্বাই এ হাজার হাজার মহিলা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী, বোন উর্মিলা দেবী ও ভাইঝি সুনীতি দেবী কলকাতা রাস্তায় প্রকাশ্য-বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। মহিলাদের দানে "তিলক স্বরাজ তহবিল" অলংকারে ভরে ওঠে। উর্মিলা দেবীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত "নারী কর্ম মন্দির" -এর সদস্যরা কলকাতায় আইন অমান্য করে। মুসলিম মহিলারাও আন্দোলনে যোগ দেন। শওকত আলীর মাতা বাঈ আম্মান বোরখা খুলে লাহোরের জনসভায় ভাষণ দেন।
নেতৃত্ব :- অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের মধ্যে সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, উর্মিলা দেবী, সুনীতি দেবী, কমলা নেহরু, বাঈ আম্মান ও আশালতা সেন প্রমুখ।
মূল্যায়ন :- অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীসমাজের সক্রিয়তা পরবর্তী আন্দোলনগুলিকে আরো ব্যাপক ও জনপ্রিয় করে তোলে। যদিও সুরক্ষার জন্য গান্ধীজি প্রান্তিক মহিলাদের নামাতে আগ্রহী ছিলেন না। তবুও মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার যথার্থই বলেছেন যে - "এই আন্দোলনে সারা দেশজুড়ে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়।"
৩) আইন অমান্য আন্দোলনে নারী জাতির ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- অসহযোগ আন্দোলন অপেক্ষা আইন অমান্য আন্দোলন কালে (১৯৩০ - ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ ) তুলনামূলকভাবে নারীদের যোগদান ছিল অধিক। অভিভাবকরা গান্ধীজীর হাত নিরাপদ মনে করে মহিলাদের আন্দোলনে সামিল হতে দেন।
লবণ আইন ভঙ্গ :- আইন অমান্য আন্দোলনের মূল আকর্ষণ ছিল লবণ আইন ভঙ্গ করা। ডান্ডি যাওয়ার পথে তিনি যেসব জায়গায় সভা করেন সেইসব সভায় অসংখ্য নারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন। এরপর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার নারী লবণ আইন ভঙ্গ শুরু করে দেয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচি :- লবণ আইন ভঙ্গের সাথে বিদেশি বস্ত্র ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিংয়ে নারীরা অংশ নেয়। এর পাশাপাশি বোম্বাই, লাহোর, দিল্লি শহরের নারীরা প্রকাশ্য বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সরকারি স্কুল - কলেজ, অফিস - আদালত ত্যাগ করে এবং সরকারি রাজস্ব দেওয়া বন্ধ করে তারা আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।
নারী সংগঠনে যোগদান :- এই আন্দোলনে গান্ধী পত্নী কস্তুরবা গান্ধী, কমলা নেহেরু, নেলী সেনগুপ্ত বাসন্তী দেবী, উর্মিলা দেবী, মাতঙ্গিনী হাজরা প্রমুখরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। এই সময়ে "দেশ সেবিকা সংঘ", বাংলার "মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ" এবং "কলকাতার ছাত্রী সংঘ" বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সরোজিনী নাইডুর অবদান :- গান্ধীজীর নির্দেশে সুরাটের ধরসানায় সরকারি লবনের গোলা দখলের দায়িত্ব নেন আব্বাস তায়েবজি। তিনি গ্রেফতার হলে এই অভিযানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সরোজিনী নাইডু। এই সময় তিনি "রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ" গঠন করেন।
মূল্যায়ন :- আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভূমিকার কথা অনেকেই উল্লেখ করেছেন। গান্ধীবাদের পাশাপাশি নারীরা সশস্ত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নারী শিক্ষার প্রসার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে মহিলাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিদেশি সাংবাদিক ব্রেলসফোর্ড এবং জর্জ স্লোকোম্বর বলেছেন যে, "আইন অমান্য আন্দোলনের কোনো অবদান না থাকলেও নারী মুক্তির ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে"।
৪) সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো। ৮
উত্তর :- উনিশ শতকের শেষার্ধে এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধে বহির্ভারতের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ঘটনা ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নারী শক্তির গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট লর্ড কার্জন বাংলাকে দ্বিধা বিভক্ত করার চেষ্টা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বা স্বদেশী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে বিপ্লববাদের সূত্রপাত হয়। এই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলা তথা ভারতের নারী সমাজ যুক্ত হয়।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী :- বাংলা ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের পীঠস্থান এখানে বহু নারী তাদের বিপ্লবী কর্মের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। যেমন -
i ) বীণা দাস :- বাংলা সশস্ত্র আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বীণা দাস এক স্মরণীয় নাম। আধা বিপ্লবী সংগঠন "ছাত্রী সংঘ" - এর সদস্যা তথা কলেজ ছাত্রী বীণা দাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করেন। জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও তাকে হত্যার অভিযোগে বীণা দাসের কারাদণ্ড হয়।
ii ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার :- বাংলা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে আর এক উল্লেখযোগ্য নাম চট্টগ্রামের মেয়ে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। মাস্টারদা সূর্যসেনের নির্দেশে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সময় প্রীতিলতা অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। ক্লাব আক্রমণের সময় প্রীতিলতা আহত হন, কিন্তু ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার থেকে মৃত্যুও শ্রেয় - এই বিবেচনা করে পটাশিয়াম সায়ানাইড মুখে দেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে এই সাহসিনী নারী শহীদ হন।
iii ) কল্পনা দত্ত :- সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠন "ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি" - এর সদস্যা বিপ্লবী কল্পনা দত্ত জেলের অন্যান্য বিপ্লবীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। পরে প্রীতিলতার সঙ্গে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব নেন। তবে আক্রমণের আগেই তিনি ধরা পড়ে যান এবং বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
iv ) দিপালী সংঘ :- জাতীয় আন্দোলনে মেয়েরা যাতে সক্রিয়ভাবে যোগদান করতে পারে সেই কারণে জাতীয়তাবাদী নেত্রী লীলা নাগ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে একটি ক্লাব গড়ে তোলেন। তিনি এর নাম দেন 'দিপালী সংঘ'। এর উদ্দেশ্য ছিল মুক্তি সংগ্রামের জন্য নারীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। এই শঙ্খের সদস্যদের লাঠি খেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হতো। এর পাশাপাশি নারীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহ দেওয়া হত। এই সংঘের অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
v ) শান্তি ও সুনীতি :- কুমিল্লার দুজন ছাত্রী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলি করে হত্যা করেন। আবার উজ্জলা মজুমদার দার্জিলিংয়ের গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করলে ধরা পড়েন ও জেলবন্দী হন।
vi ) দুকড়িবালা দেবী :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বিপ্লবী কর্মে মেয়েদের অংশগ্রহণে নজির পাওয়া যেতে থাকে। বীরভূমের ঝাউতলা গ্রামের দুকড়িবালা দেবী নিজের বাড়িতেই রডা কোম্পানির ৭ টি পিস্তল ও ১ বাক্স কার্তুজ লুকিয়ে রেখেছিলেন। এই অপরাধে তাঁর কারাদণ্ড হয় এবং তিনি হলেন বিপ্লবী কর্মে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় মহিলা।
vi ) ননী বালা দেবী :- হাওড়ার বাল্যবিধবা ননীবালা দেবী সংসারের কর্ত্রী সেজে পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। দেশের প্রয়োজনে তিনি সিঁদুর পড়তেও কুণ্ঠিত হননি। পুলিশ তাকে পেশোয়া থেকে গ্রেফতার করে।
vii ) ঝাঁসি বাহিনী :- চিকিৎসক ডঃ লক্ষ্মী সেহগল নিজের উজ্জ্বল কর্মজীবন ছেড়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এই বাহিনীর অন্যতম কৃতিত্ব ছিল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ইম্ফল অভিযানে এই বাহিনী সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে। সুভাষচন্দ্র বসু এই বাহিনীর নাম দেন ঝাঁসির রানী ব্রিগেড।
viii ) বিপ্লবী সংগঠন :- কলকাতায় সরলা দেবী চৌধুরানী বিপ্লবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি নিজেও বাড়িতে একটি আখড়া গড়ে তোলেন। একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করে সেখানে বিপ্লবীদের শরীর চর্চা ও অস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হতো। এছাড়াও তিনি প্রতাপাদিত্য উৎসব ও বীরাষ্ট্রমী ব্রত পালন করেন।
মূল্যায়ন :-: এইভাবে নারীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। ব্যাপ্তিতে সীমিত হলেও প্রকৃতিগতভাবে তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ছিল।
৫) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- জাতীয় আন্দোলনের এক অগ্নিগর্ভ পর্বে ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে লর্ড কার্জনের আবির্ভাব ঘটেছে। তার আক্রমণাত্মক নীতির কারণে বঙ্গ দেশে বিভাজন ঘটে। এই বঙ্গ বিভাজনের প্রতিবাদে সর্বাত্মক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা "বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন" নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজ বিপুল উদ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
ছাত্র সমাজের অবদান :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ছাত্র সমাজ। ছাত্র সমাজ বাংলার সর্বত্র স্বদেশীয়ানার প্রচার করেছিল। যেমন -
i ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ :- এই সময় ছাত্র সমাজ গভীর উৎসাহের সঙ্গে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে এসে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হয়। বিদেশি কাগজ ও কলম পরিত্যাগ করে। আন্দোলনে ছাত্রদের উৎসাহ থেকে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রসমাজকে "স্বনিয়োজিত প্রচারক" বলে অভিহিত করেন।
ii ) পিকেটিং ও বয়কট :- বাংলার ছাত্ররা বিলেতি দোকানের সামনে পিকেটিং শুরু করেন। বিদেশি লবণ, চিনি, কাপড় প্রভৃতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রামে - গঞ্জে স্বদেশী দ্রব্য তৈরীর কাজে ছাত্ররা প্রধান ভূমিকা নেয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বদেশি দ্রব্য বিক্রি করতে থাকেন এবং তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় - "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই।"
বিভিন্ন সার্কুলার :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাত্রদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্য "কার্লাইল সার্কুলার" জারি করা হয়। আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
বিপ্লবী আন্দোলন :- বঙ্গভঙ্গের অল্প সময় পরেই ( ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ) ক্ষুদিরাম বসু কিংসফোর্ড কে হত্যার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে পড়ে। ইংরেজ সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এদের আন্দোলনকে দমন করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই আন্দোলনে ভাটা পড়ে।
৬) অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে। গান্ধীজি ঘোষণা করেছিলেন যে, বিদেশি সরকারের সঙ্গে কোনো রকম সহযোগিতা করা পাপ।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি :- অহিংস অসহযোগে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল দু ধরনের -
১) ইতিবাচক বা গঠনমূলক এবং
২) নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক।
নেতিবাচক কার্যাবলি :- আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছাত্ররা সরকারি স্কুল কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। ছাত্ররা বিদেশি দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়, বিদেশি পণ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিদেশি পণ্য বর্জনের প্রচার চালিয়ে বয়কট আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ছাত্রদের এই আন্দোলন বাংলা বোম্বাই পাঞ্জাব আসাম প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় চিত্তরঞ্জন দাস বলেছিলেন - "Education can wait, Swaraj cannot."
ইতিবাচক কার্যাবলি :- এই আন্দোলনের সময় স্বদেশী উদ্যোগে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, বারানসী বিদ্যাপীঠ, কাশী বিদ্যাপীঠ, বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতে এলে ছাত্ররা কলকাতা শহরে ধর্মঘট পালন করে এবং "যুবরাজ ফিরে যাও" ধ্বনি দেয়।
অসহযোগ আন্দোলনে চরকা ও খাদি পোশাক তৈরি, মদ্যপান নিবারণ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ প্রভৃতি সংস্কার মূলক কর্মসূচিতে ছাত্র সমাজ অংশগ্রহণ করে।
মূল্যায়ন :- ১৯২২ - এ উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরায় উত্তেজিত জনতা ২২ জন পুলিশ কর্মীকে পুড়িয়ে মারলে গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকেই ছাত্র আন্দোলন কেমন যেন দুর্বল হতে হতে বন্ধ হয়ে যায়।
৭) আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- আইন অমান্য আন্দোলন দুটি পর্বে সংগঠিত হয়েছিল। প্রথমটি ১৯৩০ - ৩২ এবং দ্বিতীয়টি ১৯৩২ - ৩৪। প্রথম পর্বের আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্ররা অনেক বেশি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
আইন অমান্য ও ছাত্র সমাজ :- ছাত্ররা বিভিন্নভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হয়।
i) আইন অমান্য আন্দোলনের ছাত্ররা স্কুল কলেজ বয়কট করে।
ii) বিদেশি দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং করে।
iii) বিদেশি দ্রব্যে অগ্নিসংযোগ করে।
আন্দোলনের বিস্তার :- ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্ররা আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হয়। বাংলা, বিহার, বোম্বাই, গুজরাট ও আসামে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বরিশালে ছাত্রীরা কলেজের প্রবেশপথে ছাত্র - শিক্ষকদের পথ আটকান। ছাত্রীদের স্লোগান ছিল - "Up up national flag, down down the Union Jack."
সরকারি দমনন নীতি :- ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একটানা দমন পীড়ন চলতে থাকে। ছাত্র, যুব সংগঠন গুলি বেআইনি বলে ঘোষিত হয়। বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কুল কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আন্দোলনের অবসান :- দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধীজি যোগ দিলেন আন্দোলন কিছুটা গতিহীন হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৩৪ এর মে মাসে গান্ধীজি আন্দোলন প্রত্যাহার করলে ছাত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
৮) ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর :- ১৯৪২ - এর এপ্রিল মাসে ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার পর আগস্টে বোম্বাইয়ে ভারতছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই আন্দোলনের মূল প্রাণশক্তি ছিল ছাত্র এবং যুবকেরা।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও ছাত্র সমাজ :- গ্রামে - গঞ্জে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বার্তা ছাত্রসমাজ পৌঁছে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষকে আন্দোলন মুখী করে তুলতে ছাত্র সমাজের অবদান ছিল অসামান্য।
ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ :- জাতীয় নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকার দ্বারা গ্রেফতার হওয়ায় ছাত্ররা লাগাম ছাড়া ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলন পর্বে খাজনা বন্ধ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সেতু, পোস্ট অফিস, রেলস্টেশন ধ্বংস করার কাজে ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।
ছাত্র - জনতা ঐক্য :- দিল্লিতে ছাত্রদের ওপর ইংরেজ সৈন্যরা গুলি চালালে ক্রদ্ধ ছাত্র - জনতা নির্বিচারে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে। দিল্লির এই ঘটনা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
ধর্মঘট :- বহু স্থানে ছাত্ররা ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে ছাত্ররা ধর্মঘট শুরু করে। এমনকি বারানসীতে ছাত্ররা সরকারি প্রশাসনকে স্তব্ধ করে দেয়।
হেমু কালানি :- সরকার বিরোধী নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজের মধ্যে রেললাইন অপসারণ করতে গিয়ে ফাঁসির দড়িতে আত্ম বরণ করেন ১৭ বছরের কিশোর বীর দেশপ্রেমিক হেমু কালানি।
আন্দোলনে বিস্তার :- বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন প্রচারের উদ্দেশ্যে গ্ৰামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা, আসাম, মাদ্রাজ, মহীশূর ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা চলে। ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘটের উপর পুলিশ গুলি চালালে পাঁচ জন ছাত্র নিহত হন।
মূল্যায়ন :- সরকারের বর্বর দমন নীতির হলে ১৯৪২ - এর শেষের দিকে আন্দোলনে ভাঁটা পড়ে। এ সময় প্রতিবাদে গান্ধীজী অনশন সত্যাগ্রহ শুরু করেন।
৯) সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করো। ৮
উত্তর :- গণআন্দোলন, বিপ্লবী বা সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন এবং সশস্ত্র আন্দোলন - এই ত্রিধারার মিলিত ইতিহাস হল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এবং বিশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ও রাজনৈতিক মুক্তি লাভের জন্য ভারতে সশস্ত্র বৈপ্লবিক পদ্ধতিতে যে আন্দোলনের সূচনা ও বিকাশ ঘটে, তা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে ছাত্র সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান :- বিপ্লববাদের প্রসারে বাংলাদেশের কয়েকটি সমিতির বিশেষ অবদান ছিল। এই সমিতি গুলিতে যোগদানের মাধ্যমে বাংলার ছাত্র সমাজ সশস্ত্র বৈপ্লবিক কাজে অংশগ্রহণ করে।
অনুশীলন সমিতি :- সতীশচন্দ্র বসুর উদ্যোগে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। নিয়মিত ব্যায়াম, লাঠিখেলা, সাঁতার কাটা, মুষ্টিযুদ্ধ অস্ত্র চালনা ও নানান ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি ঘটানো হতো। এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনকে অচল করে দেওয়া। ক্রমে ঢাকা, ফরিদপুর, চট্টগ্রামে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।
যুগান্তর দল :- বিপ্লবী ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে বারীন্দ্র ঘোষ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি দল গড়ে তোলেন। তাঁদের মুখপত্র ছিল "যুগান্তর পত্রিকা"। সেই পত্রিকা কে কেন্দ্র করে যুগান্তর দল গঠিত হয়। এই দলই সর্বপ্রথম বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে বোমা ইত্যাদি মরণাস্ত্রের ব্যবহারের কথা প্রকাশ্যে প্রচার করেন।
অ্যান্টি - সার্কুলার সোসাইটি :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সার্কুলার জারি করা হয়। সরকারের এই সমস্ত সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু কলকাতায় অ্যান্টি - সার্কুলার সোসাইটি ( ১৯০৫ খ্রি ) প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র সমাজকে বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহিত করা এবং বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর বৈপ্লবিক কর্মকান্ড :- যুগান্তর দলের সদস্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী কলকাতার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড কে হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তারা ভুলবশত মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন। এই ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করলেও ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি ( ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ) হয়।
লোম্যান হত্যা :- বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য বিনয় কৃষ্ণ বসু পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান ও ঢাকার পুলিশ সুপার হাডসনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান এবং ১৯৩০ - এ লোম্যানকে হত্যা করেন।
অলিন্দ যুদ্ধ :- বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের বিনয় বাদল দীনেশ ১৯৩০ এর ৮ ই ডিসেম্বর বাংলার শাসন কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন। সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন এবং এরপর লাল বাজার থেকে আগত বিরাট সংখ্যক পুলিশের সঙ্গে রাইটার্সের বারান্দায় যুদ্ধ করেন, যা 'অলিন্দ যুদ্ধ' নামে পরিচিত।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও সূর্য সেন :- মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী ১৯৩০ এর ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। সূর্যসেন সেদিন চট্টগ্রাম কে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন এবং লক্ষ লক্ষ ছাত্রের কন্ঠ ধ্বনিত হয় - "জয়তু চট্টগ্রাম"। জালালাবাদের যুদ্ধে ১২ জন বিপ্লবীর প্রাণ যায় এবং সূর্যসেন ধরা পড়লে তাঁর ফাঁসি হয়।
জেলাশাসক হত্যা :- মেদিনীপুরের বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য বিমল দাশগুপ্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক ' পেডি '- কে হত্যা করেন। তরুণ বিপ্লবী প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য জেলাশাসক 'ডগলাস '- কে হত্যা করেন। এমনকি কলেজ ছাত্রী বীণা দাস বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করেন।
ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ :- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী প্রমূখ বিপ্লবীদের একটি দল ১৯৩২ এ চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন।
রশিদ আলী দিবস :- দিল্লির লালকেল্লায় বিচারে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন রশিদ আলীর ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এর প্রতিবাদে ১২ ই ফেব্রুয়ারি রশিদ আলী দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়। এই ছাত্র আন্দোলনে রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আব্দুল সামাদ মারা যান।
মূল্যায়ন :- এইভাবে বাংলার ছাত্র সমাজ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে প্রতিবাদ জানাই। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্ররা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাদের বিপ্লবী কার্যকলাপে ইংরেজ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে।
১০) টীকা লেখো : কার্লাইল সার্কুলার।
উত্তর :- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করতে চাইলে ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে সরকার বিব্রত হয়ে পড়ে।
কার্লাইল সার্কুলার ঘোষণা :- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী তীব্র ছাত্র আন্দোলনকে দমনের উদ্দেশ্যে তৎকালীন বাংলা সরকারের মুখ্য সচিব কার্লাইল এক ঘোষণা জারি করেন, যা কার্লাইল সার্কুলার ( ১৯০৫ ) নামে পরিচিত। এই সার্কুলারে বলা হয় -
i ) কোন কলেজে সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করা হলে বা ছাত্ররা কলেজ ত্যাগ করলে সেই কলেজের সব ধরনের সরকারি সহায়তা বন্ধ করা হবে।
ii ) ছাত্রদের সভা সমিতিতে যোগদান, পিকেটিং, বন্দেমাতরম ধ্বনি দেওয়া প্রভৃতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
iii ) নির্দেশ অমান্য করলে বেত্রাঘাত, বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, শিক্ষকদের চাকরি থেকে অপসারণ প্রভৃতি ব্যবস্থা করা হবে।
অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি :- সরকারের এই সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্র প্রসাদ বসু কলকাতায় অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি গঠন করেন। এই সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র সমাজকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ দান করা এবং সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন